স্টাফ রিপোর্টার, মোঃ সায়েদুর রহমান:
মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নের ছনকা উচ্চ বিদ্যালয়কে ঘিরে চলমান দ্বন্দ্বে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে—আদালতের আদেশ অমান্য করে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির কিছু সদস্য ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পূর্বের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে পাঠদান অব্যাহত রেখেছেন, যদিও হাইকোর্ট বিদ্যালয়ের বর্তমান পশ্চিম পাড়ের স্থানটিকেই বৈধ ঘোষণা করেছে।
আদালতের আদেশ ও বাস্তবতা
ছনকা উচ্চ বিদ্যালয়টি ধলেশ্বরী নদীর কাছাকাছি হওয়ায় প্রতিবছর ভাঙনের ঝুঁকিতে ছিল। নিরাপদ পরিবেশে শিক্ষাদানের জন্য বিদ্যালয়টি প্রায় ৪০০ মিটার দূরে পশ্চিম পাড়ে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে পাঠদান চললেও, চলতি বছরের ২০ মে একটি আদালতের স্থগিতাদেশের পর পুরাতন ভবনে পুনরায় কিছু কার্যক্রম শুরু হয়।
পরবর্তীতে ৬ জুন ২০২৫ তারিখে হাইকোর্ট স্থায়ী আদেশ দিয়ে পশ্চিম পাড়ের স্থানটিকে বৈধ ঘোষণা করে এবং পূর্বের স্থানে পাঠদানকে অবৈধ বলে উল্লেখ করে। অধিকাংশ শিক্ষক এই আদেশ অনুসরণ করে নতুন ভবনে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
আদেশ অমান্য ও দ্বন্দ্ব
তবে অভিযোগ রয়েছে, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এসএম শফিকুল ইসলাম এবং অফিস সহকারী আব্দুল গফুর আদালতের আদেশ অমান্য করে পূর্বের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান অব্যাহত রেখেছেন। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং দুইপারের বাসিন্দাদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হচ্ছে।
এ অবস্থায় বরাইদ ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল মজিদ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করলে, তাকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরে দুই পক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করেন।
প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা ও আশঙ্কা
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আদালতের নির্দেশ মান্যকারী শিক্ষকদের কাছে ২৪ জুন একটি ‘কারণ দর্শানো নোটিশ’ পাঠানো হয় যা ইউনিয়নের দুই গ্রাম পুলিশ বহন করে নিয়ে আসেন। তবে নোটিশে কোনো চেয়ারম্যান বা সভাপতির স্বাক্ষর না থাকায় শিক্ষকরা তা গ্রহণ করেননি।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাটুরিয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হলেও এখন পর্যন্ত দ্বন্দ্ব নিরসনে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, যা স্থানীয়দের মাঝে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
শিক্ষার্থীদের মানসিক বিপর্যয়
বিদ্যালয়ের চলমান দ্বন্দ্বে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে। কেউ পুরাতন, কেউ নতুন ভবনে গিয়ে ক্লাস করছে, আবার কেউ অনিশ্চয়তার কারণে স্কুলেই যাচ্ছে না। বন্ধুবিচ্ছিন্নতা ও শঙ্কা থেকে তারা মানসিক চাপে রয়েছে।
একজন অভিভাবক বলেন, “এত দ্বন্দ্বে ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দ্রুত প্রশাসন হস্তক্ষেপ না করলে বড় ধরনের অঘটন ঘটতে পারে।”
Conclusion
স্থানীয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা এবং বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির দ্বিধাদ্বন্দ্বে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দ্রুত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ না হলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা-জীবন ও এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা দুটোই হুমকির মুখে পড়তে পারে—এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সচেতন অভিভাবক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।