Satyajit Das (Moulvibazar Correspondent):
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ফুলতলা চা-বাগান বন্ধ হয়ে আছে টানা পাঁচ মাস ধরে। এতে চায়ের কুঁড়ি তোলা বন্ধ,বুড়িয়ে যাচ্ছে গাছ,আর চরম সংকটে দিন কাটাচ্ছেন দেড় হাজারেরও বেশি শ্রমিক। কাজ নেই,খাবার নেই, চিকিৎসারও সামর্থ্য নেই তাদের।
শ্রমিক রাজকুমার রবিদাস পিত্তথলির রোগে ভুগছেন,প্রয়োজন অস্ত্রোপচার। কিন্তু তার করুণ প্রশ্ন;-“পেট খালি রেখে আর কতদিন চলা যায়?”
১৮৯৬ সালে স্থাপিত এই বাগান একসময় ব্রিটিশদের মালিকানায় থাকলেও বর্তমানে এটি পরিচালনা করছে ‘দ্য নিউ সিলেট টি এস্টেটস লিমিটেড’। কোম্পানির চেয়ারম্যান মো. রফিক বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। শ্রমিকদের অভিযোগ,গত কয়েক বছর ধরেই মজুরি দিতে গড়িমসি করছিল প্রতিষ্ঠানটি। অবশেষে ২০২৩ সালের ৯ আগস্ট বাগান ‘অস্থায়ীভাবে’ বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
শ্রমিকেরা জীবিকার তাগিদে কিছুদিন নিজেরাই কাজ চালিয়ে যান। কিন্তু সংকট না কাটায়,গত ১৫ ডিসেম্বর তারা পুরোপুরি কাজ বন্ধ করে দেন।
বাগানের প্রধান করণিক আবদুল ওয়াদুদ জানান, ভরা মৌসুমে শ্রমিকদের সাপ্তাহিক মজুরির পরিমাণ ২৩ লাখ টাকার মতো। বছরের অন্য সময়েও লাগে ১৭-১৮ লাখ টাকা। চা বিক্রির প্রক্রিয়া ও নিলামের জটিলতায় সময়মতো অর্থ জোগান দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
বর্তমানে বাগানে কেবল কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী নিরাপত্তার স্বার্থে আছেন। কারখানা ও অফিস তালাবদ্ধ,চা-গাছে কুঁড়ি তুলছেন না কেউ। অনেক শ্রমিক বিকল্প খুঁজে অন্য বাগানে স্বল্প মজুরিতে বা দিনমজুর হিসেবে কাজ করছেন।
শ্রমিক পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি রবি বুনারজি বলেন,“১৭ সপ্তাহের মজুরি আর রেশন বাকি। প্রশাসনের কাছে বহুবার গেছি, কিন্তু তেমন কোনো সহায়তা পাইনি।”
বাগান ব্যবস্থাপক শিহাব উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন,চা বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনার পর আগামী ২৭ মে জুড়ী উপজেলা পরিষদে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে শ্রমিক প্রতিনিধি, প্রশাসন ও মালিকপক্ষ অংশ নেবেন।
তবে জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বাবলু সূত্রধর জানিয়েছেন,এখনো এ বিষয়ে তারা কোনো লিখিত বার্তা পাননি। তিনি বলেন,“বাগান চালুর ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে।”
শ্রমিকেরা এখন তাকিয়ে আছেন সেই বৈঠকের দিকে,যেখানে নির্ভর করছে তাদের ভবিষ্যৎ জীবিকার সিদ্ধান্ত।