অ আ আবীর আকাশ, লক্ষ্মীপুর :
লক্ষ্মীপুরে এক মাদ্রাসা ছাত্রকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে শিক্ষকের বিরুদ্ধে। আহত ছাত্র চিকিৎসা নিচ্ছে হাসপাতালে। শনিবারে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে লোক দেখানো শালিশ বসিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা হয়েছিলো। ভিকটিমের মা বাদী হয়ে আজ সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
জানা যায়, পৌরসভার উত্তর তেমুহনীর ছায়েদ উল্লাহ মোলভী বাড়ী সংলগ্ন আল মঈন ইসলামী একাডেমী নামক মাদ্রাসায় হিফজ বিভাগে অধ্যয়নরত মো: ফাহাদ (১৩) প্রতিদিনের মতো শনিবার সকাল ৬টায় শ্রেণীকক্ষে কোরআন তেলাওয়াত করছিল। হঠাৎ ওই বিভাগের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক হাফেজ মাওলানা উমায়ের বেত নিয়ে ফাহাদকে মারধর শুরু করে। ফাহাদ শিক্ষকের কাছে মারধরের কারণ জিজ্ঞেস করলে শিক্ষক ক্ষিপ্ত হয়ে বেধড়ক লাঠিপেটা করেন। একপর্যায়ে ফাহাদ মারাত্মক অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তার সহপাঠিরা বাড়িতে খবর দেয়। খবর পেয়ে ফাহাদের মা এসে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
তার সহপাঠিরা জানায় ফাহাদের বিরুদ্ধে এক সহপাঠিকে গালি দেওয়ার অভিযোগে হুজুর তাকে মারধর করেছে। বিষয়টি নিয়ে শনিবারে স্থানীয় পর্যায়ে শালিশ বৈঠকও হয়েছে। এতে অভিযুক্ত শিক্ষক ছাত্রকে কি কারনে বেদড়ক মেরেছেন তার সদুত্তর দিতে না পারায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। আহত ছাত্রের হাসপাতালের চিকিৎসার জন্য কিছু টাকা মাদ্রাসা কর্তপক্ষ বহন করার কথা সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ছাত্রের পরিবার এ সিদ্ধান্ত মেনে নেননি।
ছাত্রের মা এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার ছেলেকে হাফেজ বানানোর জন্য মাদ্রাসায় দিয়েছি, তাকে তো মেরে ফেলার জন্য দেইনি। যে ভাবে ছেলেকে পেঠানো হয়েছে তা বর্বরতার সামিল। আমি এর উপযুক্ত বিচার চাই।
ঘটনার পরপরই অভিযুক্ত শিক্ষক মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে যাওয়ায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মাদ্রাসার সুপার কাম পরিচালক (বড় হুজুর নামে খ্যাত) শিক্ষক মাওলানা বশির আহমদ জানান, কাজটি ঠিক হয়নি। নতুন শিক্ষক বিষয়টা বুঝতে পারেননি।
স্থানীয়রা জানান, এ ধরনের মাদ্রাসায় হেফজ পড়ার নামে আড়ালে টর্চার সেলে চলছে শিশু নির্যাতনের মতো ভয়ানক ঘটনা। এর আগেও ফুটন্ত ডালে পড়ে এক ছাত্র ও এলাকার মোল্লাবাড়ীর পুকুরে জোর করে নামিয়ে সাঁতার শিখাতে গিয়ে এক ছাত্র পানিতে ডুবে নির্মম মৃত্যু হয়। এসব ঘটনা গোপনে ধামাচাপা দেয়া হয়েছে। ছাত্র নির্যাতনের মতো ঘটনাতো নিত্যই চলে।
ভেতর থেকে সবসময় তালা লাগিয়ে রাখায় বাহির থেকে কেউ প্রবেশ করতে পারে না। এ সুযোগে তারা ভেতরে দম বন্ধ করে ছাত্রদের উপরে চালায় অবর্ণনীয় নির্যাতন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির এক সদস্য বলেন, এ ভাবে মারধর করা ঠিক হয়নি। তবে সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ না করে মিটমাট করে ফেলা ভালো ছিল। অভিযুক্ত শিক্ষককে মাদ্রাসা থেকে প্রত্যাহার করা হবে।
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল মোন্নাফ জানান, এ বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জামশেদ আলম রানা বলেন, এমন ঘটনা শুনেছি তবে অভিযুক্তের কাছ থেকে কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে ওই মাদ্রাসার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।