অ আ আবীর আকাশ, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :
লক্ষ্মীপুরে কয়েকদিনের দিনের টানা বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। তলিয়ে গেছে নিচু এলাকা ও রাস্তাঘাট। কারও কারও পুকুর ভেসে মাছ বেরিয়ে গেছে। এতে গত বছরের ন্যায় বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে জনমনে।
এদিকে লক্ষ্মীপুর সদরসহ রায়পুর রামগতি কমলনগর রামগঞ্জ চন্দ্রগঞ্জ এলাকার বিভিন্নস্থানে পানি নামতে না পরায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বাজারগুলোর ড্রেনেজ ব্যবস্থা বেহাল এবং যত্রতত্র ভরাট হয়ে পড়ায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও বাজারমুখী সাধারণ নাগরিকেরা।
১০জুলাই বৃহস্পতিবার সারাদিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সরেজমিনে বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার চিত্র দেখা গেছে।
উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট মৌসুমি লঘুচাপের কারণে গত শনিবার ৫জুলাই, সকাল থেকে টানা বৃষ্টি শুরু হওয়া বৃষ্টিপাত এখনও অব্যাহত রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নিচুস্থান ভরাট হয়ে পড়ায় পানি প্রবাহের রাস্তা বন্ধ হয়ে পড়েছে। এছাড়া নালা বা খাল দখল হয়ে পড়ায় ঠিকমতো বৃষ্টির পানি নামতে পারছে না। তাই জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দালাল বাজারের মহাদেবপুর গ্রামের বাসিন্দা কামরুজ্জামান কাজল বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে বাড়ির রাস্তায় ডুবে গেছে। পানি ঠিকমতো নামতে পারছে না। খালে বাঁধ গড়া জাল দিয়ে রাখায় পানি নামতে ব্যহত হচ্ছে। কালাগাজী বাড়ীর পুলের পশ্চিম পাশে খাল ভরাট করে তিন ফুট কালভার্ট দেয়ায় পানি নামতে না পারায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে পড়ায় পানি প্রবাহে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা দূর না হলে জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ বাড়বে।’
একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাসুদ রানা বলেন, পথেঘাটে এবং বসতবাড়ির আশেপাশে পানি উঠে পড়েছে। চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
লক্ষ্মীপুর পৌর এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক রবিউস সানি আকাশ বলেন, দীর্ঘ বৃষ্টিতে আমার বাড়ীতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে৷ পৌরসভার ড্রেনে পলিথিন ময়লা থাকায় পানি নামতে পারছে না। আমার এলাকার এক মাছ চাষির পুকুর ভেসে মাছ বেরিয়ে গেছে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এদিকে জলাবদ্ধতার পাশাপাশি বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গেল বছর ভারী বৃষ্টিপাত এবং ফেনীর বন্যার পানির চাপে লক্ষ্মীপুরের ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। এবারও সে আশঙ্কা করছে লক্ষ্মীপুরবাসী।
সাংবাদিক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, জেলার বিভিন্ন স্থানে খাল দখল হয়ে আছে। দখলদাররা খাল দখল করে পানি প্রবাহের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। এতে বৃষ্টির পানি ঠিকমতো নামতে পারছে না। গেল বছর খালের পানি প্রবাহ বন্ধ থাকায় দীর্ঘমেয়াদি বন্যার কবলে পড়তে হয়েছে। তারপরেও খাল দখল উচ্ছেদ করে পানি প্রবাহের রাস্তা স্বাভাবিক করা হয়নি। তাই এবারও বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, পৌরসভার ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে না। ফলে বৃষ্টির পানি নামতে না পারায় পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
লক্ষ্মীপুর পৌর প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. জসিম উদ্দিন সাংবাদিক অ আ আবীর আকাশকে বলেন, জলাবদ্ধতার পেছনে মূলত নাগরিক সচেতনতার অভাব দায়ী। নাগরিকরা যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলায় ড্রেনগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া অবাধে খাল দখল, অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ও পুকুর ভরাটের কারণেও পানি নিষ্কাশনে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার সচেতন করা হলেও তেমন সাড়া মিলছে না। বিভিন্ন স্থানে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে আমরা খালের উচ্ছেদ অভিযান এবং খাল পরিষ্কার অভিযান অব্যাহত রেখেছি।
জেলার রামগতি উপজেলায় স্থাপিত আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের আবহাওয়া পর্যবেক্ষক সোহরাব হোসেন বলেন, গত ৭ জুলাই রামগতিতে ১৬১ মিলিমিটার এবং ৮ জুলাই ১১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টিপাত আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে। তবে ভারী বৃষ্টিপাত কমে আসতে পারে।