জাবেদ শেখ, শরীয়তপুর প্রতিনিধি:
শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলায় সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে ভয়াবহ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ‘কাবিখা ও কাবিটা’ কর্মসূচির আওতায় চলমান ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৫৬টি প্রকল্পের বড় একটি অংশেই কাজ না করেই অর্থ আত্মসাৎ, ঘুষ বাণিজ্য এবং ভুয়া প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারি অর্থ লুটপাট চলছে বলে অভিযোগ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্টদের।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, উপজেলায় মোট বরাদ্দ হয়েছে ১ কোটি ২৬ লাখ ৮৭ হাজার ৮৮ টাকা এবং ৯০.৬৬ মেট্রিক টন গম ও সমপরিমাণ চাল, যার বাজারমূল্য প্রায় ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রকল্পের অন্তত ৫০ শতাংশ অর্থ বাস্তব কাজের জন্য খরচই হচ্ছে না।
ঘুষ দাবি ও নগদ অর্থ জমার অভিযোগ
অনেক ইউপি সদস্য এবং কাজের সভাপতি অভিযোগ করেছেন, প্রকল্প শুরুর আগেই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) অফিসে নগদ ঘুষ দিতে বাধ্য করা হয়। প্রতি লাখ টাকায় ১৫-২০ হাজার টাকা ঘুষ আদায় করা হয় বলে তারা জানিয়েছেন।
এক ইউপি সদস্য নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, “কোনো কাজ শুরু করার আগেই অফিসে টাকা না দিলে কাজ আটকে দেওয়া হয়।”
কুচাইপট্রি ইউপি সদস্য রুস্তম সরদার বলেন, “আমার প্রকল্পের টাকাও ১৫ শতাংশ কেটে নেওয়া হয়েছে। অফিস সহকারী সজল সাহা ও বদিয়ার রহমান এতে জড়িত।”
ভুয়া ও কাগুজে প্রকল্পের বিস্তার
নলমুড়ি ইউনিয়নের পাঁচকাঠি গ্রামে রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পে ৩ লাখ ৫ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও স্থানীয়রা জানান, সেখানে একচিমটি মাটিও ফেলা হয়নি। ৩০ বছরের বাসিন্দা দুলাল আকন বলেন, “এই রাস্তায় কোনও কাজই হয়নি।”
চরমনপুরা এমরানিয়া নূরানি মাদ্রাসার মাঠ ভরাট প্রকল্পেও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ। সভাপতি সোবাহান বাবুর্চি স্বীকার করেছেন, “৩ লাখ টাকার প্রকল্পে ৫০ হাজার টাকা অফিসে দিতে হইছে।”
জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন
কিছু ইউপি সদস্য সরাসরি সুবিধাভোগীদের কাছ থেকেও টাকা আদায় করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সিয়াম হাওলাদার নামের এক ব্যক্তি বলেন, “ফারুক মেম্বার আমার কাছ থেকে ৩০-৪০ হাজার টাকা নিয়েছেন।”
Administration response
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ইকবাল কবির বলেন, “আমি ব্যস্ত আছি, পরে অফিসে এসে কথা বলুন।”
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আহমেদ সাব্বির সাজ্জাদ বলেন, “আমি এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঘুষের অঙ্ক চমকে দেওয়ার মতো
সরকারি বরাদ্দের আনুমানিক ১৫ শতাংশ ঘুষ হিসেবে আদায় করা হলে তার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এই বিপুল অর্থ কোথায় গেল, কারা নিয়েছে—সেই প্রশ্নে এখনো মুখে কুলুপ এঁটেছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা।
স্থানীয়দের দাবি, অবিলম্বে স্বচ্ছ তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, নইলে গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পগুলো শুধু দুর্নীতির উৎস হিসেবেই থেকে যাবে।