মো. রেজাউল হক শাকিল, ব্রাহ্মণপাড়া (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:
বাঁশ-বেতের তৈরি ঝুড়ি, চালুনি, কুলা, মোড়া—ক pernah ছিল গ্রামবাংলার প্রতিটি ঘরের অতি প্রয়োজনীয় সামগ্রী। সময়ের বিবর্তনে সেই ঐতিহ্যবাহী শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। আধুনিক প্লাস্টিকসামগ্রীর সহজলভ্যতায় হারিয়ে যেতে বসেছে এই কুটিরশিল্প। তবুও কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার রাধা চন্দ্র নম এখনো আঁকড়ে আছেন পৈতৃক এই পেশা।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের দীর্ঘভূমি এলাকার বাসিন্দা ৫৫ বছর বয়সী রাধা চন্দ্র নম বলেন, “বাঁশ-বেত শিল্প আমাদের বংশগত পেশা। বাবার হাত ধরে শিখেছি, তিনি শিখেছেন তার বাবার কাছ থেকে। এখন আর তেমন আয় হয় না, তবুও মায়ার টান ছাড়তে পারি না।”
রবিবার বিকেলে তার বাড়িতে গেলে দেখা যায়, স্ত্রী মঞ্জু রানী নমকে নিয়ে এখনো শিল্পচর্চায় ব্যস্ত রাধা। বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি করছেন সংসারিক কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী। যদিও এখন আর আগের মতো ক্রেতা নেই, তবুও কাজে কোনো বিরতি নেই তাদের।
রাধা জানান, একসময় এই পণ্যের ব্যাপক কদর ছিল। হাট-বাজারে বিক্রি করেই চলত সংসার। কিন্তু এখন প্লাস্টিকসামগ্রীর দাপটে সেই বাজার প্রায় নেই বললেই চলে। উপরন্তু, আগে যেখানে সহজে বাঁশ পাওয়া যেত, এখন তা কিনতে হয় চড়া দামে।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মাসুদ রানা বলেন, “একসময় এই অঞ্চলে বাঁশের প্রাচুর্য ছিল, এখন তা নেই। ফলে বাঁশ-বেত শিল্পে কাঁচামালের সংকট দেখা দিয়েছে। তাছাড়া প্লাস্টিকসামগ্রীর সহজলভ্যতায় এর চাহিদাও কমে গেছে।”
তিনি বলেন, “এই শিল্প পরিবেশবান্ধব ও প্রাচীন ঐতিহ্যের অংশ। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বাঁশ-বেত শিল্প আবারও পুনরুজ্জীবিত হতে পারে।”
দরকার শুধু উদ্যোগ, পৃষ্ঠপোষকতা ও সচেতনতা। নইলে রাধা চন্দ্র নমের মতো শেষ প্রজন্মের কারিগররাও হারিয়ে যাবেন সময়ের স্রোতে, আর এই শিল্প হয়ে উঠবে শুধুই ইতিহাস।