সত্যজিৎ দাস, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
২০২৪ সালের জুলাইয়ে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া কোটা সংস্কার আন্দোলনের ঢেউ মৌলভীবাজারের কুলাউড়াতেও পৌঁছেছিল। সেই সময় ছাত্রজনতার সরব উপস্থিতি এবং ক্ষোভের প্রকাশ স্থানীয়ভাবে আলোচনার জন্ম দেয়। তবে আন্দোলনের প্রায় এক বছর পর সরকার ঘোষিত আর্থিক অনুদান বিতরণকে কেন্দ্র করে কুলাউড়ায় সৃষ্টি হয়েছে নতুন বিতর্ক ও অসন্তোষ।
গত ৮ মে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন’-এর আওতায় আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী হিসেবে জেলার ২৮ জন শিক্ষার্থীকে এক লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়। এই তালিকায় কুলাউড়া উপজেলা থেকেও কয়েকজন ছিলেন, যাদের হাতে চেক তুলে দেন জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন।
তবে বিতরণের পরপরই তালিকা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। স্থানীয় ছাত্রনেতা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ— যাঁরা আন্দোলনে ছিলেন না বা কোনোভাবেই আহত হননি, তাঁদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে অনুদান প্রদান করা হয়েছে। পক্ষান্তরে, যাঁরা সত্যিকার অর্থেই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং মামলার মুখোমুখি হয়েছেন, তাঁরা বঞ্চিত হয়েছেন।
কুলাউড়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ও কোটা আন্দোলনের স্থানীয় সমন্বয়কারী ওসমান গণি বলেন, “আমার জানামতে কুলাউড়ায় কোনো গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। মৌলভীবাজার সদর ও জুড়ী উপজেলায়ই প্রকৃত হামলার ঘটনা ঘটে। অথচ কুলাউড়া থেকে কয়েকজন ‘আহত’ হিসেবে অনুদান পেয়েছেন, যা বাস্তবতা-বিরুদ্ধ।”
তালিকা তৈরির দায়িত্ব ছিল ‘জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন’-এর কুলাউড়া উপজেলা কমিটির ওপর। আহ্বায়ক ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং সদস্য সচিব ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন মইনুল ইসলাম ও আরমান রফিক।
তবে ছাত্র প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধেই উঠেছে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ। আন্দোলনকারীরা দাবি করছেন, তারা প্রকৃত আহতদের বাদ দিয়ে নিজেদের ঘনিষ্ঠদের নাম তালিকাভুক্ত করেছেন। যদিও মইনুল ইসলাম জানান, “আমরা সাতজন আহত শিক্ষার্থীর তথ্য স্বাস্থ্য দপ্তরে জমা দিয়েছি।”
কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাকির হোসেন বলেন, “আমরা প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে তালিকা তৈরি করে পাঠিয়েছি, যা যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত করা হয়েছে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শাহ জহুরুল হোসেন বলেন, “তালিকা তৈরির কাজটি ছাত্র প্রতিনিধিদের দায়িত্বে ছিল। উপজেলা প্রশাসনের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা ছিল না।”
বঞ্চিত আন্দোলনকারীরা এখন প্রশ্ন তুলছেন— কে ‘আহত’ হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন, সেই মানদণ্ড কী ছিল? এবং কোন প্রক্রিয়ায় অনুদানের তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে?
তাঁরা একটি নিরপেক্ষ তদন্ত ও প্রকৃত অংশগ্রহণকারীদের স্বীকৃতি ও সহায়তার দাবি জানাচ্ছেন।