মনির হোসেন, বেনাপোল (যশোর):
গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাতে বেনাপোল স্থলবন্দরে দেখা দিয়েছে মারাত্মক জলাবদ্ধতা। ফলে পণ্য খালাস, পরিবহন এবং নিরাপত্তা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বন্দরের ইয়ার্ড ও গুদামে হাঁটুপানি জমে থাকায় কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে কয়েকটি প্রবেশগেট সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকাই এই দুরবস্থার মূল কারণ। বন্দরের অভ্যন্তরে জমে থাকা পানিতে কেমিক্যাল মিশে গিয়ে শ্রমিকদের চর্মরোগসহ নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
জলাশয়ের মতো টার্মিনাল, দুর্ভোগে শ্রমিক ও চালকরা
চ্যাটিজ টার্মিনাল—যেখানে আমদানি পণ্য খালাস ও ট্রাক পার্কিং হয়—সেটি এখন দেখলে জলাশয় মনে হয়। প্রতিদিন সেখানে হাঁটুপানি মাড়িয়ে শ্রমিকদের কাজ করতে হয়। অনেকেই চুলকানি ও অন্যান্য ত্বকজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। একই অভিযোগ পণ্যবাহী ট্রাকচালকদেরও।
অপরদিকে, আগের এক অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত কেমিক্যালসামগ্রী এখনো বৃষ্টির পানিতে মিশে পরিবেশ দূষণ করছে, যা শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বাড়াচ্ছে।
আধুনিক বন্দর, অথচ অবকাঠামো দুর্বল
বছরে প্রায় ২২–২৪ লাখ টন পণ্য আমদানি হয় বেনাপোল বন্দর দিয়ে। এর জন্য রয়েছে ৩৩টি শেড, তিনটি ওপেন ইয়ার্ড এবং একটি ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড। তবে অধিকাংশ অবকাঠামোই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া নির্মিত হওয়ায় বৃষ্টির সময় জলাবদ্ধতা অনিবার্য হয়ে উঠেছে।
বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে গুদামগুলো নিচু হওয়ায় পানি বের হতে পারে না। ফলে পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে এবং গুদামে পানি ঢুকে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের দাবি: রাজস্বের অংশ উন্নয়নে ব্যয় হোক
আমিনুল হক, বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি সমিতির সহসভাপতি বলেন,
“বন্দরে পানি নিষ্কাশনের কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই। এত রাজস্ব আদায়ের পরও অব্যবস্থাপনা লজ্জাজনক।”
তানভিরুল ইসলাম সোহান, যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাধারণ সম্পাদক বলেন,
“বছরে এই বন্দর থেকে সরকার প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে। অথচ পানি নিষ্কাশনের মতো মৌলিক বিষয়েও সাড়া মেলে না। আমাদের দাবি—রাজস্বের একটি অংশ যশোর অঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়নে বরাদ্দ দেওয়া হোক।”
প্রশাসনের বক্তব্য
বন্দরের উপপরিচালক মামুন কবীর তরফদার Tell me,
“রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ রেললাইন সম্প্রসারণে কালভার্ট না রেখে মাটি ভরাট করেছে, ফলে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিষয়টি সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
বেনাপোল দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর হলেও জলাবদ্ধতা ও অবকাঠামো দুর্বলতা এর কার্যকারিতা বাধাগ্রস্ত করছে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, কার্যকর পানি নিষ্কাশন ও ব্যবস্থাপনা না হলে এই বন্দর শুধু দুর্ভোগই বাড়াবে, শুল্ক আদায়ের পাশাপাশি।