জামিউল ইসলাম তুরান, শান্তিগঞ্জ (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি:
বর্ষা এসেছে। নতুন পানি এসেছে হাওরে। প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে শান্তিগঞ্জ উপজেলার হাওরপাড়ে। তবু হাওরের জেলেদের মুখে নেই তেমন হাসি। কারণ, হাওরের মাছ এখন আগের মতো আর ধরা পড়ে না। অথচ এই হাওর—বিশেষ করে ‘দেখার হাওর’—এলাকার হাজারো জেলের জীবিকার প্রধান উৎস।
শান্তিগঞ্জে প্রায় ৯ হাজার নিবন্ধিত জেলে এবং আরও প্রায় ৬ হাজার অনিবন্ধিত মানুষ মৎস্য পেশার সঙ্গে যুক্ত। জুন-জুলাই থেকে মাছের মৌসুম শুরু হলেও জলবায়ু পরিবর্তন, অবৈধ বাঁধ, পানিদূষণ ও অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার কারণে হাওরের স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে, কমছে মাছের উৎপাদন।
পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামের সুনু মিয়া বলেন, “ঋণ করে নৌকা ও জাল ঠিক করেছি। আগে ইউনিয়ন অফিসে জাল জমা রেখে একটু সাহায্য পেয়েছিলাম। কিন্তু এখন নিষিদ্ধ সময়ে সরকার সাহায্য না করলে মা মাছ ধরতে বাধ্য হই।”
আরেক জেলে আব্দুর রউফ বলেন, “বর্ষার বাইরে তো কোনো কাজ নেই। বিকল্প আয়ের সুযোগ দিলে আমরা মাছ ছাড়াই বাঁচতে পারি। আগে দিনে ৫-৭ কেজি মাছ পেতাম, এখন দুই কেজিও পাওয়া যায় না। সংসার চালানো দায় হয়ে গেছে।”
তবে আশার আলো দেখছেন তারা। শান্তিগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিদ্যুৎ চন্দ্র সরকার জানান, “জুলাই-আগস্টে দেখার হাওরসহ বিভিন্ন হাওরে পোনা মাছ অবমুক্তের কাজ শুরু হবে। এর মাধ্যমে প্রাকৃতিকভাবে মাছের সংখ্যা বাড়বে।”
He also said, “আমরা হাওরে পোনা ছাড়ার পাশাপাশি চায়না জাল, কারেন্ট জাল, রিং ঝাল ও অবৈধ বাঁধ অপসারণে নিয়মিত অভিযান চালাই। সচেতনতামূলক প্রচারও চালানো হয়।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হিসেবে তিনি জানান, আগামী বছর মা মাছ ধরা নিষিদ্ধ সময়ে (২৯ মে–২৮ জুন) জেলেদের জন্য বিশেষ ভিজিডি চাল বা রেশন দেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে। যাতে তারা বিকল্প আয়ের ভরসায় মাছ না ধরেই জীবন চালাতে পারেন।
তবে স্থানীয় জেলেদের মতে, শুধু পোনা মাছ অবমুক্ত করলেই হবে না। হাওরের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে, অবৈধ বাঁধ সরাতে হবে, এবং বর্ষা শেষে কর্মহীন হয়ে পড়া জেলেদের জন্য বিকল্প আয়ের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।