Habiganj Correspondent:
এক সময় ভাড়ায় চালাতেন অন্যের মাইক্রোবাস। সে সময় নুন আনতে যার পান্তা ফুরানো অবস্থা ছিল। হঠাৎ আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক।
হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড মহলুলসুনাম এলাকায় প্রায় ২ কোটি টাকা খরচ করে তৈরি করেছেন চারতলা বিলাসবহুল বাড়ি। একই এলাকায় রয়েছে ৫ ও ২২ শতাংশের দুটি প্লট। যার বর্তমান মূল্য প্রায় আড়াই কোটি টাকা। এছাড়াও উপজেলার ফরিদপুর মৌজায় কিনেছেন ৩০ শতাংশের একটি জমি। এসব ছাড়াও নামে বেনামে রয়েছে কমপক্ষে ১০ কোটি টাকার সম্পত্তি।
আর এর সবকিছুই তিনি করেছেন সাবেক এক সচিব ও জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার ঘনিষ্ঠজন পরিচয়ে বিগত ৮ বছরে। মাইক্রোবাসের ড্রাইভার থেকে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে ওঠা ওই ব্যক্তির নাম আবুল কাশেম। তিনি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার আদ্যপাশা গ্রামের মৃত আব্দুল হেকিমের ছেলে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৩-২০০৪ সালের দিকে রমিজ টিটি নামে একব্যক্তির মাইক্রোবাসে হেলপারি দিয়ে শুরু হয় আবুল কাশেমের কর্মজীবন। পরবর্তীতে দীর্ঘদিন মাধবপুর উপজেলার বাঘাসুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিনের মাইক্রোবাস চালান। এসময় পরিচয় হয় সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব অশোক মাধব রায়ের সঙ্গে। সচিবের পারিবারিক ড্রাইভার হিসেবে গাড়ী চালাতেন আবুল কাশেম। এসময় শায়েস্তাগঞ্জে পৌর যুবদলীগের নেতা হয়ে ওঠেন। শায়েস্তাগঞ্জে আওয়ামীলীগ বিএনপি কোনো মারামারি হলে আবুল কাশেমকে আওয়ামীলীগের পক্ষে মারামারিতে দেখা যেতো।
পরবর্তীতে ২০১৬ সালে মাইক্রোবাস চালানো বাদ দিয়ে শুরু করেন ঠিকাদারি। জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা ও সাবেক সচিবের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে প্রভাব বিস্তার করে ভাগিয়ে নিতে থাকেন একেরপর এক কাজ। ঠিকঠাক মতো কাজ না করেও একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সচিবের প্রভাব দেখিয়ে উত্তোলন করেন বিল। আওয়ামী লীগ নেতা ও বিভিন্ন দপ্তরের অসাধু কর্মকর্তাদের মনোরঞ্জনের জন্য নিয়মিত মাদক সাপ্লাইয়ের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ঠিকাদার জানান, কাশেম বিভিন্ন দপ্তরের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা এবং জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়মিত মাদক সাপ্লাই দিয়ে তাদের মনোরঞ্জন করতেন। সেই সুবাদে সখ্যতা গড়ে তুলে ভাগিয়ে নিতেন বড় বড় কাজ। হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অংকের টাকা।
হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান সেলিমের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত কাশেম এলজিইডি, শিক্ষা প্রকৌশলসহ বিভিন্ন দপ্তরের কাজ বাগিয়ে নিতেন। কোন কর্মকর্তা তার কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুললে সাবেক সচিবের কাছের লোক পরিচয় দিয়ে বদলিসহ শাস্তির হুমকি দিতেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে জাফলং এলাকার একাধিক পাথর ব্যবসায়ীর টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। সবশেষ শায়েস্তাগঞ্জে ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার উপর হামলায় আওয়ামী লীগের পক্ষে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। বর্তসানেও তিনি ঠিকাদারী কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। অনেকের প্রশ্ন তার খুঁটির জোর কোথায়।
ড্রাইভার থেকে আঙ্গুল তুলে কলাগাছ হয়ে ওঠা আবুল কাশেমের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দুদকের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এসব অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য আবুল কাশেমের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
কিবরিয়া চৌধুরী, হবিগঞ্জ