মোঃ আসাদুজ্জামান মিয়া, ফরিদপুর:
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় কথিত দুই সাংবাদিকের অপকর্ম ফাঁস হয়ে যাওয়ায় এবার প্রকৃত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেই অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছেন তারা। অভিযুক্তরা হলেন আরিফুজ্জামান চাকলাদার আপেল এবং তন্ময়উদ্দৌলাহ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আরিফুজ্জামান আপেল বোয়ালমারী উপজেলার দেউলী গ্রামের মৃত কাদের চাকলাদারের ছেলে এবং তন্ময় আলফাডাঙ্গা উপজেলার ফলিয়া গ্রামের অদর উর্দৌলার ছেলে। এ দুজন দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতার আড়ালে চাঁদাবাজি, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, প্রতারণা ও বাল্যবিবাহে সহায়তার মতো অপরাধ করে আসছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বুড়াইচ গ্রামের ভ্যানচালক বিল্লাল সরদার অভিযোগ করেন, থানার ওসির নাম ব্যবহার করে আপেল তার কাছে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন এবং ৫ হাজার টাকা আদায় করেন। পরে হুমকির মুখে পড়ে তিনি থানায় মামলা দায়ের করলে আপেল গ্রেফতার হয়ে এক মাস কারাগারে থাকেন।
অপরদিকে স্থানীয় স্কুলশিক্ষিকা রুমা বেগম অভিযোগ করেন, তন্ময় তার কাছ থেকে গ্রিল ব্যবসার কথা বলে ছয় লাখ টাকা নেন। পরে টাকা ফেরত চাইলে অস্বীকার করেন তিনি। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ ছাড়াও আদালতে মামলা করেন ভুক্তভোগী।
এছাড়া, বানা ইউনিয়নের দক্ষিণ শিরগ্রামে এক বাল্যবিবাহের আয়োজনেও জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে আপেল ও তন্ময়ের বিরুদ্ধে। অভিযোগ ওঠে, ৩০ হাজার টাকায় বিয়ে সম্পন্ন করার চুক্তি করেছিলেন তারা। বিষয়টি জানাজানি হলে উপজেলা প্রেসক্লাব সভাপতি আলমগীর কবির প্রশাসনকে অবহিত করেন এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) একেএম রায়হানুর রহমান অভিযান চালিয়ে বিয়েটি বন্ধ করে দেন।
এসব অপরাধ সামনে চলে আসার পরই অভিযুক্ত দুইজন প্রকৃত সাংবাদিক আলমগীর কবির ও প্রতিবেদক কবীর হোসেনের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য প্রচার শুরু করেন। আলফাডাঙ্গা উপজেলা প্রেসক্লাব এই অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, মধুখালী উপজেলার নোয়াপাড়া এলাকায় এক মুড়ির মিলে চাঁদা দাবি করতে গিয়ে গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছেন আপেল ও তন্ময়। টলি মালিক সমিতির সভাপতি দাউদ হোসেন মোল্লাও তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন, যা বর্তমানে বিচারাধীন।
অভিযুক্তদের একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা কোনো মন্তব্য করেননি।
এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) একেএম রায়হানুর রহমান বলেন, “বাল্যবিবাহের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে বিয়ে বন্ধ করি। মেয়ের মা লিখিতভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ১৮ বছর না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দেবেন না। বরপক্ষকে জরিমানা করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “প্রকৃত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। আমি কেবল প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেছি।”
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, কথিত সাংবাদিক আপেল ও তন্ময় অতীতে ক্ষমতাসীন দলের ছত্রচ্ছায়ায় থেকে অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছেন। বর্তমানে তারা রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম বদল করে নতুনভাবে অপতৎপরতায় নেমেছেন।
এলাকাবাসীর দাবি, এই ধরনের প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যেন সাংবাদিকতার নামে কেউ আর সাধারণ মানুষকে হয়রানি করতে না পারে।