Basudeb Roy, Nilphamari Correspondent:
নীলফামারীতে দুটি আলাদা স্থানে গ্যাস সিলিন্ডার ও উত্তরা ইপিজেডের একটি কারখানায় মেশিন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুইবোন সহ ৪ জন অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। আহতদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয়েছে। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) সকাল ৬টার দিকে জেলা সদর থানার উত্তরা ইপিজেড সংলগ্ন হাজীপাড়ার এলাকায় বাড়িতে রান্নার সময় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে সুইটি আক্তার(২০) ও তাসকিনা আক্তার(২৩) নামে দুই বোন দগ্ধ হন।
এ ঘটনায় সুইটি চিকিৎসাধিন অবস্থায় নিহত হন। তারা এ জেলার ডোমার উপজেলার হরিণচড়া ইউনিয়নের সেউটগাড়ি গ্রামের কৃষক বাবুল হোসেনের মেয়ে। দুই বোন উত্তরা ইপিজেডের সেকশন সেভেন কোম্পানিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন ও মিজানুর রহমানের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।
উত্তরা ইপিজেড ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন সিনিয়র স্টেশন অফিসার খুরশীদ আলম ও স্থানীয়রা জানান, সকাল ৬টার দিকে রান্নার সময় হঠাৎ গ্যাস সিলিন্ডারের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ হয়। এতে সুইটি আক্তার ও তাসকিনা আক্তার অগ্নিদগ্ধ হন। অগ্নিদগ্ধ দুই বোনকে উদ্ধার করে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সেখানকার চিকিৎসক তাদেরকে রংপুর মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্থানাস্তরিত করেন।
অপর দিকে একই দিন বেলা সোয়া ১১টার দিকে নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে অবস্থিত সনিক কারখানার ( খেলনা তৈরির কারখানায়) ডায়াস্টিক মেশিন বিস্ফোরণের ঘটনায় দুই শ্রমিক অগ্নিদগ্ধ হন। এ ঘটনায় ইপিজেডের শ্রমিকরা বের হয়ে বিক্ষোভ সহ সড়ক অবরোধ করে। আহত দুই শ্রমিক হলো লিটন চন্দ্র রায় (২৫) ও দেলোয়ার হোসেন (২৮) । উত্তরা ইপিজেডের বেপজার নির্বাহী পরিচালক (ইডি) আব্দুল জব্বার এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এর আগে সম্প্রতিকালে ওই কারখানায় একই কারনে দুই শ্রমিক নিহত হয়েছিল।
উত্তরা ইপিজেড ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা খোরশেদ আলম বলেন, সনিক নামের একটি কারখানা থেকে দগ্ধ অবস্থায় দুজনকে উদ্ধার করে নীলফামারী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। আহত শ্রমিকদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের নীলফমারী হাসপাতাল থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
এদিকে বিস্ফোরনের পর উত্তরা ইপিজেডের ওই কারখানার সকল শ্রমিক বাহিরে নেমে আসে এবং বিক্ষোভ করে সড়ক অবরোধ করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কিছু শ্রমিক জানায় ওই ফ্যাক্টরিতে হঠাৎ করে কাজের চাপ বেড়ে গেছে। ২৪ ঘন্টায় তিন ধাপে শ্রমিকরা কাজ করছে। ফলে খেলনা তৈরীর মেশিন গুলো বিশেষ করে ডায়াস্টিক মেশিন বন্ধ করা হয় না। ধারনা করা হচ্ছে ডায়াস্টিক মেশিন গরম হয়ে বিম্ফোরন ঘটেছে।
শ্রমিকরা আরও জানায়, এর আগে চলতি বছরের গত ৬ এপ্রিল রাত আটটার দিকে ডায়াস্টিক মেশিন বিস্ফোরণের ঘটনায় দুই শ্রমিক রমজান আলী (২৬) ও খায়রুল ইসলাম (২৫) অগ্নিদগ্ধ হয়েছিল। তাদের চিকিৎসার জন্য ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প¬াস্টিক সার্জারি হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে গত ১০ এপ্রিল খায়রুল ও ১২ এপ্রিল রমজান মারা যায়। এরপরেও সনিক কারখানাটির কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে নি।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শ্রমিকরা অসন্তোষ হয়ে উঠে ওই কারখানার ভিতরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং নীলফামারী- সৈয়দপুর মহাসড়কের ইপিজেড মোড়ে সড়ক অবরোধ করে। পরে নীলফামারী জেলা সদরের ফায়ার সার্ভিসের ২টি ইউনিট,সেনাবাহিনী ,র্যাব এবং অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। নীলফামারী সদর থানার ওসি এম আর সাঈদ বলেন, দুই বোনের ঘটনাটি ওই বাড়িতে গিয়ে পরিদর্শন করা হয়। এ ছাড়া উত্তরা ইপিজেডের ঘটনায় শ্রমিকরা বিক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিল। সেখানে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখা হয়েছে।