Shahriar Kabir, Paikgachha:
খুলনার উপকূলীয় উপজেলা পাইকগাছায় সুপেয় ও নিরাপদ পানির তীব্র সংকটে পড়েছে এলাকাবাসী। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, সরকারি উদ্যোগের ঘাটতি এবং প্রাকৃতিক জলাধারগুলোর সঠিক সংরক্ষণ না থাকার ফলে এ সংকট দিনে দিনে প্রকট হয়ে উঠেছে। লবণাক্ত পানির এলাকা হওয়ায় প্রাকৃতিক উৎসের উপর নির্ভরশীল জনগণ আজ নিরাপদ পানির জন্য হাহাকার করছে।
বিশেষ করে পৌরসভা এলাকাসহ উপজেলার লতা, দেলুটি, লস্কর ইউনিয়নের হাজার হাজার নারী-পুরুষ প্রতিদিন মাইলের পর মাইল হেঁটে, পুকুর, জলাধার কিংবা অকেজো ফিল্টার থেকে পানি সংগ্রহে বাধ্য হচ্ছে। এতে নারীরা সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়ছেন। অনেকে শ্যাওলাভর্তি দুর্গন্ধযুক্ত পুকুরের পানি পান করছেন, ফলে বাড়ছে পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি।
চরম সংকটে নারী ও শিশুরা
লতার এপার থেকে সাঁকো পার হয়ে দেলুটির মিষ্টি পানির ফিল্টার থেকে পানি আনতে প্রতিদিন শত শত নারী ছুটছেন। অথচ বহুদিন ধরে ফিল্টারটি অকেজো। আবার লস্করের আলমতোলা ও লক্ষীখোলার মাঝখানে অবস্থিত ফিল্টার পুকুর থেকে ২–৩ শতাধিক লোক নির্ভর করছেন যেখানে পানি স্বল্পতা প্রতিনিয়ত।
লক্ষীখোলার গৃহবধূ মাহফুজা বেগম বলেন,
“অর্ধ কিলোমিটার পথ হেঁটে কলসি-পটে পানি আনি, দুই দিন চলে যায়। কিন্তু প্রতিদিন আসা কষ্টকর।”
পৌরসভায় হাহাকার: পানি নেই, লাইনও বন্ধ
পৌর সদরের মধুমতি পার্ক, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পুকুর, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ও উপজেলা পরিষদের পুকুরগুলোতে মানুষের দীর্ঘ লাইন—তাও অনেক সময় পানি মেলে না। পৌর এলাকার প্রায় ৫০% পরিবারেই পানি লাইন থাকলেও পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় ব্যবহার করতে পারছে না। নতুন সংযোগও এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ।
সমাধান যেটুকু চলছে, তা পর্যাপ্ত নয়
পৌরসভার উদ্যোগে গদাইপুরে একটি পাম্প হাউজ নির্মাণ কার্যক্রম চলছে। জমি ভরাট, ঘর নির্মাণ, বিদ্যুৎ সংযোগসহ অনেক কাজ সম্পন্ন হলেও এখনো বোরিং হয়নি। পৌর প্রশাসক ও ইউএনও মাহেরা নাজনীন বলেন,
“পাম্প হাউজ প্রকল্প সম্পন্ন হলে পাইকগাছায় পানির সংকট অনেকটা কেটে যাবে।”
স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মাহবুবর রহমান জানান,
“অস্বাস্থ্যকর পুকুরের পানি পান করায় হেপাটাইটিস এ, টাইফয়েড, কলেরা, আমাশয়সহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।”
পরামর্শ: বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও পুকুর খননের উদ্যোগ
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী প্রশান্ত পাল বলেন,
“লবণাক্ততা ও নদীর নাব্যতা হ্রাসের কারণে মিঠা পানি সংকট বাড়ছে। এখনই বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, পুকুর খনন ও জলাধার পরিষ্কারের উদ্যোগ নিতে হবে।”
বেসরকারি উদ্যোগ
সংস্থা DORP জানায়, ৩টি ইউনিয়নে ৫টি পানির ফিল্টার বসানো হয়েছে, যার মাধ্যমে প্রায় ১,০০০ এরও বেশি মানুষ উপকৃত হচ্ছে। তবে এটি প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।