বেরোবি প্রতিনিধি:
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) একাধিক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠলেও এখনো পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। অভিযুক্ত শিক্ষকরা যথারীতি অফিস করছেন, নিচ্ছেন ক্লাস ও পরীক্ষা। এতে অনেক শিক্ষার্থী নিরাপত্তাহীনতা ও বিব্রতবোধ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ এপ্রিল রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মো. তানজিউল ইসলাম জীবন ও এক ছাত্রীর কথোপকথনের অডিও ফাঁস হয়। পরে ২৪ এপ্রিল আরও এক প্রাক্তন ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর ই-মেইলের মাধ্যমে মানসিক নির্যাতন, যৌন হয়রানি ও মার্ক টেম্পারিং-এর অভিযোগ আনেন।
এছাড়া পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রশীদুল ইসলাম এবং সহকারী অধ্যাপক অতুল চন্দ্র সিংহ-এর বিরুদ্ধেও যৌন হয়রানি ও নম্বর কম দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ১৭ এপ্রিল একদল শিক্ষার্থী উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। ১৯ এপ্রিল একটি অভিযোগভিত্তিক ফেসবুক পোস্টে প্রকাশিত স্ক্রিনশটে শিক্ষক-ছাত্রীর কথোপকথনের কিছু অংশ ভাইরাল হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মার্ক টেম্পারিংয়ের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই প্রতিবেদন জমা পড়ে। তবে যৌন হয়রানির বিষয়ে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও এখনো পর্যন্ত সেগুলোর কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ পায়নি।
অভিযুক্ত ড. তানজিউল ইসলাম পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের পদ থেকে পদত্যাগ করলেও এখনো বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা নিচ্ছেন তিনি।
এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “যৌন হয়রানির মতো গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও অভিযুক্তদের ক্লাস নেওয়া ও প্রশাসনিক কাজে সম্পৃক্ত থাকা আমাদের জন্য মানসিক চাপ ও নিরাপত্তাহীনতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী খোকন ইসলাম বলেন, “যথেষ্ট প্রমাণ থাকার পরও প্রশাসন কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেয়নি। মৌখিকভাবে ক্লাস থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে, কিন্তু তা বাস্তবে প্রয়োগ হচ্ছে না।”
গত ১২ মে পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করে প্রতিবাদ জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এই বিষয়ে যৌন হয়রানির তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ড. মোছাঃ সিফাত রুমানা কোনো মন্তব্য দিতে রাজি হননি। অপরদিকে, ড. রশিদুল ইসলাম-এর বিরুদ্ধে গঠিত কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর মো. ফেরদৌস রহমান জানান, “প্রতিবেদনের সময় বাড়ানো হয়েছে। জমা দেওয়ার পরই বিষয়টি পরিষ্কার হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শওকাত আলী বলেন, “আমি এখনো রিপোর্ট পাইনি। রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া সম্ভব নয়।”
শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, অভিযোগের দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত সম্পন্ন করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি নিরাপদ ও সম্মানজনক শিক্ষা পরিবেশ নিশ্চিত হয়।