শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি :
গাজীপুরের শ্রীপুরে কৃষি জমিতে অবৈধ সিসা কারখানা গড়ে উঠেছে। পুরোনো ব্যাটারির সিসা পুড়িয়ে তৈরি হচ্ছে নতুন সিসা। এতে ক্ষতিকারক বিষাক্ত রসায়নিক পদার্থে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকিসহ আশপাশের অন্তত ২০ বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।

সোমবার সকাল ১১ টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার কেওয়া পূর্বখণ্ড গ্রামে কারখানাটির অবস্থিত। ২০১৫ সালে চীনা দুই নাগরিক কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে। চালুর পর থেকে গাছের পাতা মরে যাওয়া শুরু হয়। কৃষি জমি ফসল নষ্ট হয়। কাঁঠালসহ বিভিন্ন ফলের গাছ মরে যায়। এলাকায় শ্বাসকষ্টের রোগী বেড়ে যায়।
স্থানীয় মৃত মোতালের মেয়ে তারাবানু জানান,ধোঁয়ায় আমার ২ বিঘা ক্ষেতে ধানের চিটা আসার আগেই হলুদ হয়ে গেছে।স্থানীয় বাসিন্দা সামসুদ্দিন জানান, কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া কুয়াশার মতো এলাকায় ছড়িয়ে যায়। ঠান্ডা কাশিজনিত রোগীর সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলছে। আমার একটা আম গাছের ফল পড়ে গেছে।নেত্রকোনা বাসিন্দা হাসান আলীর ছেলে দিন ইসলাম বলেন, আমি এই এলাকায় বাড়া বাসায় থাকি। আমি তিন বিঘা জমিতে লিজ নিয়ে বঙ্গবন্ধু ধান লাগাইছি। আমার ধান শীষ বের হচ্ছেনা। ধান গাছ ধোয়ায় নষ্ট হয়ে গেছে। গত বছর ধান নিতে পারিনাই। আমার এইখানে জমিতে ফসল ফলানো আর সম্ভব না। কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার গিয়ে কোনো উপকার পাইনি।
কেওয়া পূর্ব খন্ড গ্রামের কবির সরকার জানান, কারকানা থেকে ভোরে ধোয়া বের হয়। পুরো এলাকা সাদা হয়ে যায়। এসব ধোয়ায় আমার শিশু অসুস্থ হয়। এলাকার গর্ভবতী মা অনেকে অসুস্থ রয়েছে। আমি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিতে দায়িত্বে ছিলাম আমার জানা মতে আমারশিশু সহ ১০ জন শিশু স্বাস কষ্টে ভুগছে।
কেওয়া পূর্ব খন্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান জানান, এই কারখনার শব্দ দূষণ, বিষাক্ত ধোয়া, ময়লা পানিতে স্কুলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। স্কুল থেকে ৪০০ মিটার দূরে এই কারখানা।আমাদের জন্য ব্যপক ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। শিশু শিক্ষার্থীরা ক্লাসে বসে থাকলে ধোঁয়া আসে। তাছাড়া মাঠে সমাবেশ ও খেলাধূলা করতে পারেনা। বিদ্যালয়ে ৫০৯ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের কারখানা এই কারখানা সিফট করে অন্যত্র নিয়ে যাবেন।।
রিভার এন্ড নেচার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম জানান, গত ২০২৩ সালে এলাকাবাসী, শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থী সহ মানববন্ধন করেছি। পরে জেলা প্রশাসক বরাবরে চিঠি দিয়েছি। কিছুদিন বন্ধ ছিলো। পরে আবারও চালু হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সজীব আহমেদ জানান, আমরা ইনভেস্টিগেশন করতেছি। পরিবেশের অধিদপ্তরের লোকজন ছাড়া মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে পারবোনা। পরিবেশ অধিদপ্তকে আমরা জানাবো। আমি এসিল্যান্ডকে জানিয়েছি।
গেলি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোম্পানি লিমিটেড জিএম তরিকুল ইসলাম জানান, দুইজম চায়না নাগরিকের প্রতিষ্ঠান। এইখানে পুরাতন ব্যাটারী থেকে সিসা বের করে নতুন ব্যাটারিতে রিকোভার করা হয়। শুনেছি, এই কারখানার ধোয়ায় ও কালো পানিতে কৃষকদের ক্ষতি হচ্ছে।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর গাজীপুরের উপ পরিচালক আরেফিন বাদল জানান, গেলি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোম্পানি লিমিটেড অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এতে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। আমি পরিবেশ অধিদপ্তর লিখিতভাবে বিষয়টি জানিয়েছি।