জামিউল ইসলাম তুরান, শান্তিগঞ্জ প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের গাগলী গ্রামের জনবসতিপূর্ণ এলাকায় অপরিকল্পিত পোল্ট্রি ফার্ম গড়ে ওঠায় আশপাশের পরিবেশ, শিশু থেকে বৃদ্ধ লোকজনদের জীবন যাপন ও বসত বাড়ীতে বসবাস করা প্রায় দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে ভূক্তভোগী গাগলী গ্রামের আব্দুল মতিনের ছেলে মোঃ ওয়াসিম উদ্দিন এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
সরেজিমনে গতকাল শুক্রবার(২৮ মার্চ) দুপুরে গাগলী সাকিনের ভূক্তভোগী মোঃ ওয়াসিম উদ্দিনের বসত বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায় যে, ভূক্তভোগী মোঃ ওয়াসিম উদ্দিনের বসত বাড়ীর পার্শ্ববর্তী ০৬ বছর ধরে একই গ্রামের পোল্ট্রি ব্যবসায়ী মৃত নবাব মিয়ার ছেলে মিজানুর রহমান একটি বড় পোল্ট্রি ফার্ম সেড নির্মাণ করে পোল্ট্রি মোরগের বাঁচ্চা লালন পালন করে আসছেন। অথচ তিনি নিজে তার পোল্ট্রি ফার্ম এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস না করে অন্যত্র বসবাস করেন। নিয়মমোতাবেক জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ৫০০ গজ দূরত্বে মুরগি ও ডিম উৎপাদন করার জন্য ফার্ম করার নিয়ম থাকলেও তিনি তা না মেনে প্রতিবেশীর বসত ঘরের সীমানা ঘেষে তা নির্মাণ করেছেন।
এতে ভূক্তভোগী ও আশপাশের বসত বাড়ির শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ লোকজন পোল্ট্রি ফার্মের দুর্গন্ধের কারণে বসত বাড়ীতে বসবাস করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে। পোল্ট্রি ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান তার পোল্ট্রি ফার্মের মোরগের বাঁচ্চা লালন পালনে ফার্ম এর পরিবেশ দুর্গন্ধমুক্ত রাখতে নিচ্ছেন না কোন পদক্ষেপ। ফার্মের আশপাশে মোরগের বিষ্ঠা ও ময়লা আববর্জনা উন্মুক্ত জায়গায় রাখার ফলে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়া ছাড়াও আশপাশে বসত বাড়ীতে বায়ুর সাথে রোগজীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে। এতে পরিবেশ ও জনমানুষের ক্ষতি হচ্ছে এবং শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ লোকজনও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
অভিযুক্তের চাচা মুক্তার হোসেন, প্রতিবেশী সিরাজুল মিয়া, ফখরুজ্জামান, গুলজার আহমদ বলেন, এ পোর্ট্রি ফার্মের মোরগের বিষ্ঠার দুর্গন্ধে আমাদের বসত বাড়ীতে বসবাস করা প্রায় মুশকিল হয়ে পড়েছে। ফার্মের দুর্গন্ধে ও রোগ জীবানু ছড়িয়ে পড়ার কারণে আমাদের সহ আশপাশে বসবাসরত লোকজন ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। দিন দিন রোগ বালাই বৃদ্ধি পাচ্ছে। দিনের বেশীর ভাগ সময়ে বসত ঘরে অবস্থান করতে পারি না। শুধু খাবার সময়ে বসত বাড়ীতে আসি। বর্ষা মাসে মেঘ বৃষ্টি হলে আরো বেশী দুর্গন্ধ ছড়ায়। এতে আমরা খুবই দুর্ভোগের মধ্যে আছি।
পোলট্রি ফার্মের মালিক গাগলী গ্রামের নবাব মিয়ার ছেলে মিজানুর রহমান বলেন, জনবসতিপূর্ণ এলাকায় পোল্ট্রি ফার্ম স্থাপন করা অবৈধ এটা আমি জানি। আমি চাই আমার পাড়া প্রতিবেশীকে নিয়ে চলতে। চাই না কারো কষ্ট হউক। আমি ধানের তোষ ফার্মের পাশে ফেললেও ফার্মের ময়লা, মোরগের বিষ্ঠা ও আবর্জনা দুরবর্তী জায়গায় নিরাপদ দুরত্বে ফালাই। এখন থেকে আশপাশে আর ফেলবো না।
ভূক্তভোগী মোঃ ওয়াসিম উদ্দিন জানান, আমার বসত ভিটার লাগুয়া পোল্ট্রি ফার্ম স্থানের কারণে আমি পোল্ট্রি ফার্মের দুর্গন্ধে পরিবার নিয়া বসত বাড়ীতে বসবাস করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে। এতে আমি সহ আমার পরিবারের লোকজন ও শিশুরা প্রায় অসুস্থ হয়ে রোগে আক্রান্ত হচ্ছি এবং আমার পরিবারে শ্বাসকষ্ট রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমি মিজানুরকে তার ফার্মের ময়লা ও আর্বজন নিরাপদ জায়গায় ফেলতে ও ফার্মের দুর্গন্ধ না ছাড়ানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করি। সে কোন কথাই শুনে নাই। বরং আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রাণী করার হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছে। তাই আমি বাধ্য হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুকান্ত সাহা বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। জনগণের বসবাসে বিঘ্ন ঘটবে এমন কোনো কাজ করা যাবে না। দুর্গন্ধ ছড়ায় কিংবা পরিবেশের ক্ষতিসাধন করে এমন পোল্ট্রি ফার্ম জনবসতি থেকে দূরে স্থাপন করতে হবে। পরবর্তীতে অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।