নাজমুল হোসেন, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি :
দিনমজুর পরিবারের যুবক মিন্নাতুল্লাহ স্বপ্ন দেখেন বিদেশ গিয়ে সংসারের অভাব ঘোঁচাবেন। এ জন্য রহিমা নামে এক প্রতিবেশী মহিলা ইউপি সদস্য তাকে উন্নত দেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখান।
এরপর তিনি যোগাযোগ করেন ঢাকার আব্দুর রহমান, ফরহাদ মোল্লা, জাকির হোসেন নামে দালাল চক্রের সাথে ।পরে ঋণ করে ৬ লাখ টাকা দালাল চক্র কে দেয় তার পরিবার। দালালরা দুবাই পাঠানোর কথা বলে টাকা নিয়ে অনেক দিন ঘুরানোর পর মাত্র দুই মাসের একটি ভিসা দিয়ে ২০২৪ সালের ২৮ জানুয়ারি পাঠিয়ে দেয় কিরগিজস্তানে।
সেখানে পৌছানোর পর একটি রুমে থাকতে দেয় এবং কাগজপত্র ঠিকঠাক ও মেডিকেল করার নাম করে দুই দিন বসিয়ে রেখে পাসপোর্ট সহ যাবতীয় কাগজপত্র হাতিয়ে নেয় এজেন্সি দালাল চক্রটি। কোম্পানির আন্ডারে কাজ করার কথা দিলেও কোন কোম্পানির নাম উল্লেখ করেনি কাগজপত্রে । পরে কাজ করার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয় কোন এক অদৃশ্য দালাল চক্রের কাছে।
রাত দিন সমান ভাবে পরিশ্রম করে বেতন চাইতে গেলে সেই চক্র জানায়,তিন মাসের জন্য তোমাকে বিক্রি করে দিয়ে টাকা নিয়ে গেছে এজেন্সি দালাল চক্র। এবং বলে সেই টাকার কাজ না হলে তাকে ছাড়বে না।অপরদিকে কাজের মুজুরি প্রতি মাসে সাত শ ডলার দেওয়ার কন্টাক পেপার করা হলেও এক টাকাও তো দেইনি সেই সঙ্গে দেওয়া হয়নি ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া। দালাল চক্রটি অপর দিকে মিন্নাতুল্লাহর বাড়িতে ফোন করে বলে তাকে জীবিত ফেরত পেতে মোটা অংকের টাকা দাবী করে।
সেই মোতাবেক মিন্নাতুল্লাহর বাবা দেশ থেকে আবার ধার দেনা করে ছেলেকে জীবিত পাওয়ার আশায় প্রায় এক লাখ টাকা পাঠায় দালাল চক্রের কাছে। সেই টাকা পেয়েও আবার তাকে আরো একটি নতুন চক্রের কাছে বিক্রি করা হয়। এভাবে প্রায় মিন্নাতুল্লাহ কে ৪ বার বিক্রি করে কিজগিজস্তানের দালাল চক্রটি। বলছিলাম প্রতারণা শিকার হয়ে দেশে ফেরা ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার ভান্ডারা শান্তিপুর এলাকার মিজানুর রহমানের ছেলে মিন্নাতুল্লাহর কস্টের কথা।
মিন্নাতুল্লাহর ভোগনিপতি হাসান জানান,সমন্ধি ফোন করে বলে তাকে দালাল চক্র বিক্রি করে দিয়েছে। তার কাছে খাবার মতো নেই কোন টাকা পয়সা। সেই দেশে পাঁচ মাস ঠান্ডা হওয়ার কারণে এখন কোন কাজ করতে পারছে না মিন্নাতুল্লাহ। হাসান আলী দীর্ঘ পাঁচ মাস মিন্নাতুল্লাহর পরিবারের ভরনপোষণ সহ তাকেও বিদেশে কয়েক লাখ টাকা ধারদেনা করে পাঠিয়ে সেও এখন ঋণের চাপে কঠিন এক পর্যায়ে এসেছে। শেষমেষ মিন্নাতুল্লাহ কে ১৩ মাস পরে দেশে ফেরাতে বাবার দেওয়া ভিটে মাটি বিক্রি করে দালাল চক্রটি কে টাকা দিতে হয়েছে পরিবারকে।
পরিশেষে গত ২০২৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশে ফিরেন মিন্নাতুল্লাহ একেবারে নিঃস্ব হয়ে। দেশে ফিরার কয়েক মাস আগেই গাঁ ঢাকা দিয়েছে সাবেক মহিলা মেম্বারনি রহিমা।
এখন সর্বশান্ত হয়ে মানবেতর জীবযাপন করছেন মিন্নাতুল্লাহ সহ তার পরিবারের সদস্যরা। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক।মেয়ে ক্লাস সিক্সে পড়েন আর ছেলে বয়স প্রায় দুই বছর।
মিন্নাতুল্লাহর স্ত্রী ফজেরা খাতুন বলেন,আমার স্বামী অনেক কস্ট করে ঋণের টাকায় বিদেশ গিয়ে ছিলেন পরিবারে ভাগ্য বদলের আশায়। কিন্তু সে বিদেশে যাওয়ার পরে এমন কোন দিন বাদ যায়নি আমি সন্তানদের নিয়ে অনাহার অর্ধাহারে দিন কাটায়নি।আমি সরকারের কাছে দাবি জানায়,দালালদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হোক।
মিন্নাতুল্লাহর ভোগ্নিপতি বলেন, এই পরিবার টির পাশে সরকার সহ সমাজের বৃত্তবান মানুষরা যেন এগিয়ে আসেন। না হলে পরিবার নিয়ে তার এখন পথে নামা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।দালালদের যদি কঠিন ভাবে আইনের আওতায় আনা না যায় তাহলে তারা আরো মানুষকে পথে নামাবে।
এদিকে ভুক্তভোগীর বাবা মিজানুর রহমান বলেন,আমার ছেলের কস্টের কথা ও তাকে দেশে ফেরত আনতে রহিমা কে বলতে গেলে সে বলে তাকে ফেরত পেতে আবার টাকা দিতে হবে তাও আমি ধার দেনা করে টাকা দিছি। এরপর আমাকে না দাবীতে স্টাম্পে সাক্ষার করিয়ে নেই রহিমা মেম্বারনি। আমি কিছু একটা ভুল সিদ্ধান্ত বুঝতে পেরে আমি সেই স্টাম্প জোর করে ছিড়িয়ে নেই। এবং আমি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে তাদের নামে মামলা করার জন্য আবেদন করেছি। তারা আমার ছেলেকে এখন বিদেশে ভালো চাকরির কথা বলে সর্বশান্ত করে দিয়েছে।আমি এদের কঠিন বিচার চাই এদের বিচার না দেখলে আমি মরেও শান্তি পাবো না।
ভুক্তভোগী মিন্নাতুল্লাহ বলেন, দালাল চক্র আমাকে দুই মাসের ভিসা দিয়ে দুবাইয়ের কথা বলে,কিজগিরস্তানে পাঠিয়ে দেয়।সেখানে আমাকে তারা তিন চারবার বিক্রি করে। এতে আমি কোন বেতন পাইনি ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া পাইনি বাড়ি থেকে আমাকে আমার ভোগ্নিপতি টাকা পাঠিয়েছে তারপর আমি খেয়েছি।আমি এখন বিভিন্ন ভাবে ৮/১০ লাখ টাকার ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। আমার শেষ আশ্রয় স্থল বাবার দেওয়া ভিটেমাটি পর্যন্ত বিক্রি করে দেশে ফিরতে হয়েছে। আমি এখন নিঃশ্ব পথে নেমে গেছি।এখন আমাকে বিভিন্ন ঋণের মামলায় জেল খাটাছাড়া উপায় নাই।তাই আমি সরকারের কাছে দালালদের কঠিন বিচার চাই। সেই সাথে সরকারের কাছে আমি সহযোগিতা চাই। আমার দুটি সস্তান আমি তাদের ঠিক মতো খাওয়াতেও পারিনা টাকার অভাবে, আর পড়াশোনা করাবো কি দিয়ে।সরকারের কাছে আমার দাবি সরকার যেন আমাকে এর একটা সুষ্ঠু সমাধান দেয়।
