Md. Abdul Quddus
Sirajganj Correspondent:
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ঘাটিনা ব্রিজের রেললাইনের দুধারে কয়েক শতাধিক শিমুল গাছ রয়েছে। চারপাশে ফসলের মাঠ সবুজে ছেয়ে আছে। মৃদু হাওয়া বইছে। ভেসে আসছে শিমুল ফুলের ঘ্রাণ। কোথাও টুকটুকে লাল, কোথাও হলুদ, কোথাও কমলা। দেখে মনে হয়, কে যেন মুঠো মুঠো রং ছড়িয়ে দিয়েছে চারপাশে। প্রকৃতির এই রং, রূপ, বৈচিত্র্যের কারণ ঋতুরাজ বসন্ত। এই ফুলের সৌন্দর্যে ঋতুরাজ বসন্তের আগমনের বার্তা বয়ে আনে।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় এমন রূপে সেজেছে এখন। মৌমাছির গুঞ্জন আর পাখির কলকাকলিতে মুখর এলাকা। এ যেন কোকিলের সুমিষ্ট কুহুতানে ফাগুনের উত্তাল হাওয়া দিচ্ছে দোলা। গাছে গাছে জেগে উঠেছে সবুজ পাতা। মুকুল আর শিমুল ফুল দেখে বোঝা যায় শীত বিদায় নিয়ে এসেছে ফাগুন।
রেললাইনের দুপাশে প্রতিটি শিমুল গাছ ছেয়ে আছে লাল টুকটুকে ফুলে। ফাগুনের এই আগুন লাগা একেকটি শিমুল গাছ যেন প্রকৃতির আপন আভায় সেজে উঠেছে। পত্রবিহীন প্রতিটি শিমুল গাছে ছেয়ে থাকা লাল টুকটুকে ফুলগুলো মন কাড়ে সবার। তাই তো প্রকৃতির এমন দৃশ্য উপভোগ করতে রেললাইনে ভিড় করছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা।
ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে আবহমান গ্রামবাংলার প্রকৃতি রাঙিয়ে দেয় শিমুল ফুল। তবে কালের বিবর্তনে সিরাজগঞ্জে চোখ ধাঁধানো গাঢ় লাল রঙের অপরূপ সাজে সজ্জিত শিমুল গাছ এখন কমে যাচ্ছে। এক যুগ আগেও জেলার বিভিন্ন উপজেলার গ্রামের অধিকাংশ বাড়ির আনাচে-কানাচে, রাস্তায়, পতিত ভিটায় প্রচুর শিমুল গাছ দেখা যেত। গাছে গাছে প্রস্ফুটিত শিমুল ফুলই স্মরণ করিয়ে দিতো এসেছে বসন্ত। এ ছাড়া প্রাকৃতিকভাবে তুলা আহরণের অন্যতম অবলম্বন শিমুল গাছ।
জানা যায়, এ গাছের সব অংশেই রয়েছে ভেষজগুণ। শীতের শেষে শিমুলের পাতা ঝরে পড়ে। বসন্তের শুরুতেই গাছে ফুল ফোটে। আর এ ফুল থেকেই হয় ফল। চৈত্র মাসের শেষের দিকে ফল পুষ্ট হয়। বৈশাখ মাসের দিকে ফলগুলো পেকে শুকিয়ে যায়। বাতাসে আপনা-আপনিই ফল ফেটে প্রাকৃতিকভাবে তুলার সঙ্গে উড়ে দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়া বীজ থেকেই নতুন গাছের জন্ম হয়। অন্য গাছের মতো এ গাছ কেউ শখ করে রোপণ করে না। নেওয়া হয় না কোনো যত্ন। প্রাকৃতিকভাবেই গাছ বেড়ে ওঠে। এ গাছের প্রায় সব অংশই কাজে লাগে। এর ছাল, পাতা ও ফুল গবাদিপশুর খুব প্রিয় খাদ্য।
বর্তমানে মানুষ এ গাছ কারণে-অকারণে কেটে ফেলছে। অতীতে নানা ধরনের প্যাকিং বাক্স তৈরি ও ইটভাটার জ্বালানি, দিয়াশলাইয়ের কাঠি হিসেবে ব্যবহার হলেও সেই তুলনায় রোপণ করা হয়নি। ফলে আজ কমে যাচ্ছে শিমুল গাছ।
সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুর থেকে আসা তৌফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আগে গ্রামে প্রচুর শিমুল গাছ ছিল। এখন আর তেমন দেখা যায় না। তাই এখন শিমুল তুলার দাম অনেক বেড়ে গেছে।
সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আঃ জাঃ মুঃ আহসান শহীদ সরকার বলেন, শিমুল মূল্যবান একটি গাছ। অনেকটা অনাদরে অবহেলায় এই গাছটি বেড়ে ওঠে কিন্তু এই গাছটির ফুল ফল আমাদের অনেক উপকার করে আসছে, এর ছাল বাকল ঔষধিগুন হিসেবে অনেক পরিচিত এর ছাল ঘাঁ ও রক্ত আমাশয় ঔষধি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এর ফল থেকে যে তুলা আমরা পাই এই তুলা দিয়ে বালিশ লেপ অনেক আরামদায়ক। বানিজ্যিক ভাবে এর কদর অনেক। সরকারি ভাবে কৃষকদের উৎসাহ দিচ্ছি যেখানে ফসলাদি হয় না সেসব জায়গায় শিমুল গাছ লাগিয়ে পরিবেশের সৌন্দর্য ও শোভাবর্ধক হিসেবে কাজ করবে।