জয়পুরহাট জেলা প্রতিনি:
জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে দোয়া ও ইফতার মাহফিলের প্যান্ডেলে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ২৯ মার্চ শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে পাঁচবিবি পৌর শহরের দানেজপুর ডিগ্রি কলেজে মাঠে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় পাঁচটি জীবিত গরু ও একটি জবাই করা গরুর মাংস, তেল, মসলা-চাল লুট করা হয়েছে।
এ ঘটনায় আজ ২৯ মার্চ শনিবার পাঁচবিবি উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. ডালিম হোসেন (৫৫), জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম হোসেন (৩৭), পাঁচবিবি উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ফয়সাল আপেলকে (৩৬) আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছে। পৌর শহরের দানেজপুর মহল্লার সোহেল রানা বাদী হয়ে মামলাটি করেন। তবে মামলার এজাহারে আসামিদের দলীয় পদবি উল্লেখ করা হয়নি। মামলায় অজ্ঞাতনামা ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে এখনো কোনো আসামি গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।
পাঁচবিবি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাবেকুন নাহার শিখা বলেন, ‘আমার শিখা ট্রাস্ট ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে শনিবার দোয়া ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করতে চেয়েছিলাম। এরই মধ্যে শুক্রবার রাতে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ডালিম হোসেনের নেতৃত্বে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম হোসেন, উপজেলা ছাত্রদলের নেতা ফয়সালসহ বিপুলসংখ্যক লোকজন অস্ত্র নিয়ে দানেজপুর ডিগ্রি কলেজ মাঠে গিয়ে দেখভালের দায়িত্বে থাকা ফারুক হোসেনকে মারধর করেন। এতে তিনি প্রাণ ভয়ে পালিয়ে যান। এরপর ডালিম হোসেন ও তাঁর লোকজন ডেকোরেটের আসবাব ভাঙচুর করে তাতে আগুন দেন। সেখানে জবাই করতে আনা পাঁচটি গরু, একটি জবাই করা গরুর মাংস, তেল-মসলা লুট করে নিয়ে যান। খবর পেয়ে রাতেই থানা-পুলিশ ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছে।’

সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে একান্ত আলাপ কালে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তিরা বলেন৷ এখানে ইফতার মাহফিলের একটি অনুষ্ঠান হচ্ছে রাতেই দুর্বৃত্তরা এসে প্যান্ডেলে আগুন ধরে দেয় চালের বস্তা পেঁয়াজ আদা রসুন ছিল এবং এখানে ছয়টি গরু ছিল দুটি বা তিনটা গরু জবাই করে মাংস বাটা হচ্ছে৷ জবাই করা গরুরসহ জীবিত গরু সব ছিনতাই করে নিয়ে পালিয়ে যান দুর্বৃত্তরা৷ আপনাদের বাড়ির সামনে যে হামলা যে সংযোগ করে মালামাল লুট করে নিয়ে গেলেন আপনারা কাউকে চিনতে পেয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন আমরা নিজেরাই প্রাণের ভয়ে এখানে বসবাস করি চিনতে পারলেও নাম বলতে পারবা না বাবা৷
স্থানীয় ও পথচারীরা বলছেন ইফতার মাহফিলে যারা হামলা করেছেন এটি একটি অমানবিক কাজ সে যে দলেরই হোক এত বড় দুঃসাহ যারা দেখিয়েছেন তারা অবশ্যই দুষ্কৃতিকারী
রমজান মাসে ইফতারি নিয়ে দলীয় কোন্দল শুরু হয়েছে যারা খাবারের সঙ্গে শত্রুতা করে তারা জাতির শত্রু দেশের শত্রু৷ এদেশার শান্তি শৃঙ্খলা আর ফিরে আসবেনা প্রতিহিংসার রাজনীতির শুরু হয়েছে৷ চোখের সামনে একটা ইফতার পার্টি লন্ডভন্ড হয়ে গেল এখানে ১০ হাজার মানুষের ইফতারের আয়োজন করেছিল শিখা ট্রাস্ট গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা৷ আমরা এলাকাবাসী এর তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানাই৷
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ডালিম হোসেন বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ছাত্র বিশাল হত্যা মামলার আসামি গোপনে ইফতার পার্টি করতে চেয়েছিলেন। এটি জানার পর বিক্ষুব্ধ লোকজন মিছিল নিয়ে শুক্রবার রাতে ইফতার মাহফিলের আয়োজন পণ্ড করে দিয়েছেন। আমাকেসহ বিএনপির লোকজনদের আসামি করা হয়েছে। আমি উক্ত ঘটনার সময় ছিলাম না।’
জেলা ছাত্রদলের সাবেক নেতা শামীম হোসেন বলেন, পাঁচবিবি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাবেকুন নাহার শিখা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে একটি হত্যাসহ দুটি মামলার আসামি। তিনি ইফতার মাহফিলের নামে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পুনর্বাসন করছিলেন। বিক্ষুব্ধ লোকজন শিখার ইফতার মাহফিল আয়োজন পণ্ড করে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাঁচবিবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি বলেন, দোয়া ও ইফতার মাহফিল প্যান্ডেল হামলা-ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ ও ইফতারির পণ্য চুরির ঘটনায় তিনজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞতনামা ১৫০ থেকে ২০০ জনের নামে থানা মামলা হয়েছে। পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে।