Joypurhat District Representative:
অসহায়,ভূমিহীন এবং কর্মহীন ব্যক্তির পরিবারের প্রধান ও সরকারী অন্য কোন অনুদান না পাওয়া ব্যক্তিরা হবেন ভিজিএফ (ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং) কার্ডধারী কিন্ত এক্ষেত্রে কার্ড পেতে দুঃস্থ হওয়ার চেয়ে জরুরি দলীয় লোকের সঙ্গে সখ্যতা থাকা। আর এ কারণে সরকারের এই প্রকল্প থেকে প্রকৃত দুঃস্থ লোকের চেয়ে দলীয় লোকই বেশি সুফল পেয়েছেন। ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে জয়পুরহাট পৌর এলাকার রাজনৈতিক দলের কোটার ভিত্তিতে ভিজিএফ-এর কার্ড বণ্টনের অভিযাগ উঠেছে। এতে সরকারি বিশেষ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন প্রকৃত অতিদরিদ্র,অসহায় ও দুস্থ পরিবার। রোববার থেকে কার্ড ও চাল বিতরণ শুরু হলেও কার্ড ও তালিকা প্রস্ততের ব্যাপারে জানেন না ওয়ার্ডের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। কার্ড এর তালিকা তাদেরকে না দেখিয়ে বা এই সংক্রান্ত কোন সভা না করে ওয়ার্ডের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের শুধু মৌখিকভাবে জানিয়ে এই কার্ড ও চাল বিতরণ করেছেন দপ্তরের সংশ্লিষ্টরা এদিকে পৌর প্রশাসক দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সাথে সভা করে তাদের তালিকামত চাল বন্টন করা হয়েছে বলে জানান।
জানা গেছে, আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে গরিব ও দুস্থদের জন্য সরকারি ৪৬.২১ মেট্রিক টন ভিজিএফের চাল বরাদ্দ আসে। এসব চাল ৪ হাজার ৬২১ টি কার্ডের বিপরীতে জনপ্রতি ১০ কেজি করে বিতরণ করা হবে। এ লক্ষ্যে গত সপ্তাহ থেকে ওয়ার্ডভিত্তিক বরাদ্দ বণ্টনের পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষরা তালিকা প্রস্ততির উদ্যোগ নেয়। কিন্তু এতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। পৌর পরিষদের উপস্থিত হয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ‘কোটার’ ভিত্তিতে কার্ড বণ্টনের দাবি করেন। চাপে রাজনৈতিক দলের নেতাদের দাবি মেনে নেয় পরিষদের দায়িত্বশীলরা। ৪ হাজার ৬২১ টি কার্ডের মধ্য থেকে বিএনপির গোলজার গ্রæপ এক হাজার ৬শত, বিএনপির ওহাব গ্রæপ ৪ শত ৫০, জামায়াত ৪ শত’ ৫০ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ৩৮০ টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল প্রায় তিন হাজার ৫ শত কার্ড কোটায় হাতিয়ে নেয়।
জয়পুরহাট পৌরসভার অর্ন্তগত সমাজসেবা কর্মকর্তা, নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন সাবেক জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি, জামায়াত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা পৌর কর্তৃপক্ষের সাথে বসে ‘দলীয় কোটার’ ভিত্তিতে নিজ নিজ দলের জন্য কার্ড আদায় করে নিয়েছেন। রাজনৈতিক দলের নেতাদের ‘বদনজর’ পড়ার ভয়ে এসব নিয়ে কথা বলার সাহস পাননি কেউ।
জয়পুরহাট পৌর এলাকার শান্তিনগর মহল্লার শিরিন আক্তার, ওমর ছিদ্দিক বিপ্লব, চিনিকল সুইপার কলোনির নন্দলাল, চিত্রাপাড়ার শ্রী বান্না, প্রফেসরপাড়াসহ অনেকেই বলেন, ভিজিএফ চাল বিতরনের খবর আমরা জানি না। কিভাবে দিচ্ছে তাও জানি না। শুনলাম দলীয়ভাবে বিতরন করা হচ্ছে। আমাদের ত কেউ নেই কিভাবে চাল পাব বলতে পারছি না।
জয়পুরহাট পৌরসভার অর্ন্তগত সমাজসেবা কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান বলেন, বিএনপির গোলজার হোসেন ও নেতাকর্মীরা, জামায়াত নেতা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বসে কার্ডের তালিকা করা হয়েছে। সেই অনুপাতেই কার্ড বিতরণ করা হয়েছে।
জয়পুরহাট জেলা বিএনপির আহবায়ক গোলজার হোসেনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে মোবাইল কেটে দেন। পরবর্তীতে আর কোন যোগাযোগ করেননি প্রতিবেদকের সাথে।
জয়পুরহাট জেলা বিএনপির য়ুগ্ম আহবায়ক এম এ ওহাব বলেন, আমার বরাদ্দকৃত কার্ড বিতরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। কতটি কার্ড দেওয়া হয়েছে এ বিষয়টি জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
জয়পুরহাট জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী হাসিবুল আলম লিটন বলেন, আমাদেরকে ৪ শত ৫০ টি কার্ড দেওয়া হয়েছে। পৌর জামায়াতের দায়িত্বশীলদের কার্ডগুলো দেওয়ার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক হাসিবুল হক সানজিদ বলেন, আমরা ৫ শত এরম ত কার্ড চেয়েছিলাম। পৌরসভা থেকে আমাদেরকে ৩ শত ৮০ টি কার্ড দেওয়া হয়েছে।
জয়পুরহাট পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ মমিনুল ইসলাম, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ রুহুল আমিন ও ১ নং ওয়ার্ডের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক লায়লুন নাজমা বেগমসহ ওয়ার্ডের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, ভিজিএফ চাল বিতরণের কথা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ মৌখিকভাবে আমাদেরকে জানিয়েছেন, তবে এ সংক্রান্ত কোন সভা করা হয়নি। দুস্থদের তালিকা চাওয়া হইলে আমাদেরকে কোন তালিকাও দেখানো হয়নি। রাজনৈতিকভাবে কার্ড বন্টনের কথা আমরা কিছুই জানি না। কার্ড বন্টনের তালিকাতে আমরা স্বাক্ষর করব না বলেও জানিয়েছেন অনেক দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
জয়পুরহাট জেলা ত্রাণ ও পূর্নবাসন কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল করিম বলেন, দুস্থদের জন্য সরকারি ৪৬.২১ মেট্রিক টন পৌরসভার জন্য চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তালিকা প্রস্তত পৌরসভা থেকে তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। দলীয়ভাবে তালিকা প্রস্ততের ব্যাপারে আমরা কিছু জানি না। পৌরসভায় এসেছি ঘটনাটি তদন্ত করা হবে।
জয়পুরহাট পৌরসভার প্রশাসক ও উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) স্থানীয় সরকার মোহাঃ সবুর আলী বলেন, ওয়ার্ডের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের তালিকামতে দুস্থদের চাল দেওয়া হয়েছে। কোন রাজনৈতিক তালিকাতে কার্ড দেওয়া হয়নি বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।