দুই দিন আগে আমেরিকাপ্রবাসী জনাব **লা* মিয়া আমাকে ফোন করলেন। ফোনের ওপাশ থেকে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললেন—
“শাহজাহান ভাই, আমি রাজনীতি করি না। গত ৫ আগস্ট দেশেও ছিলাম না। অথচ কিছু লোক আমার ভাইয়ের কাছে চাঁদা দাবি করছে। বলছে, চাঁদা না দিলে বৈষম্যবিরোধী মামলায় আমার নাম জড়িয়ে দেবে।”
বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়লেন তিনি। যেন এক অদৃশ্য যন্ত্রণা বুকের ভেতর থেকে উঠে এসে কণ্ঠে বেঁধে গেল। আমি নির্বাক হয়ে শুনলাম। কী বলব? মামলার নামে অন্যায় ব্যবসা এখন নিত্যদিনের বাস্তবতা। কারো ওপর রাগ হলেই তার বিরুদ্ধে মামলা! টাকা পয়সা না দিলে মামলা!
কিছু প্রবাসীরা তো এমনিতেই দুর্বল, দেশে ফিরে তারা যেন জিম্মি হয়ে যান এক শ্রেণির মানুষের কাছে।
তবু নিজেকে সামলে তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করলাম, বললাম “আপনি দেশে ফিরে আসুন। টাকা উপার্জন করছেন নিজের নিরাপত্তা ও ভবিষ্যতের জন্য, আতঙ্কে পালিয়ে থাকার জন্য নয়। আমরা আছি আপনার পাশে। সিলেট নয়, ঢাকায় গিয়ে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে মামলা করুন। আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব।”
তিনি অসহায় কণ্ঠে বললেন, “ভাই, কী করব? মামলা করলেও কি আমি নিরাপদ থাকব? চাঁদা চাওয়ার মানুষগুলো শক্তিশালী। তারা প্রতিশোধ নেবে না তো?”
আমি বোঝালাম, “আপনার ভয় পাওয়ার কিছু নেই। প্রয়োজনে বৈষম্যবিরোধী সমন্বয়কদের সঙ্গেও দেখা করবেন। ওরা তো মামলা বাণিজ্য হচ্ছে জানে না। অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবেন কেন? চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে এমনভাবে মামলা করুন, যাতে তারা জীবনে আর কারও সঙ্গে এমন অন্যায় করার সাহস না পায়।”
তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। আমি শুনতে পেলাম তার শ্বাসকষ্টের মতো ভারী শ্বাসপ্রশ্বাস। কত স্বপ্ন নিয়ে দেশের জন্য পরিশ্রম করেন প্রবাসীরা, অথচ দেশে ফিরে তারা অন্যায়ের ফাঁদে পড়েন!
আমি তাকে আরও বোঝালাম, “প্রথমে থানায় যান। সহযোগিতা না পেলে জেলা পর্যায়ে যান। তাতেও কাজ না হলে রাজধানীতে গিয়ে উচ্চপর্যায়ে অভিযোগ করুন। কোথাও না কোথাও আপনাকে ন্যায়বিচার পেতেই হবে। যদি সব পথ বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলুন, সংবাদ সম্মেলন করুন, মন্ত্রণালয়ে গিয়ে আবেদন করুন।”
আমার কথায় তিনি কিছুটা আশার আলো দেখলেন। বললেন,
“আপনার কথায় একটু ভরসা পেলাম, শাহজাহান ভাই। প্রয়োজনে আবার আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।”
ফোন রেখে আমি কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলাম। চারদিকে আধো-আলো আধো-অন্ধকার, বুকের ভেতর একটা তীব্র কষ্টের অনুভূতি। প্রবাসীরা রক্ত-ঘাম ঝরিয়ে বিদেশে কাজ করেন, দেশের জন্য টাকা পাঠান, অথচ দেশে ফিরলেই তাদের জন্য অপেক্ষা করে মামলা, হয়রানি আর চাঁদাবাজির ফাঁদ, আরও কত কি!
অনেকে বলেন, দেশে ন্যায়বিচার পাওয়া অসম্ভব। কথাটি পুরোপুরি সত্য নয়। ন্যায়বিচার পেতে হলে সঠিক পথে, সাহস আর ধৈর্য নিয়ে এগোতে হয়। কিন্তু যে দেশে মামলা বাণিজ্য হয়ে যায়, যেখানে অন্যায়কারীরা দাপিয়ে বেড়ায়—সেখানে একজন নিরপরাধ মানুষের চোখের জল কতটা মূল্য পায়?
আমি জানি না, জনাব *লা** মিয়ার ভাগ্যে কী আছে। তিনি কি সত্যিই সুবিচার পাবেন? তিনি কি সত্যি সাহস করে এগিয়ে যাবেন? নাকি অসহায় চোখের জলে একদিন ক্লান্ত হয়ে যাবেন? শুধু জানি, এমন কষ্ট কোনো প্রবাসীর প্রাপ্য নয়।
পরিচালক
● এফএইচ ল সলিসিটরস লন্ডন
● এফএইচ লিগ্যাল পার্টনারস লি: ঢাকা
সম্পাদক
● আমাদের প্রতিদিন ● লন্ডন বিচিত্রা
চেয়ারম্যান
● গোলাপগঞ্জ উপজেলা সোশ্যাল ট্রাস্ট ইউকে