সেনানিবাসে আজকে যা ঘটেছে তার পুরো বর্ননা তুলে ধরা হলো লেখাটি বৈঠকে উপস্থিত একজন অফিসার পাঠিয়েছেন৷ এই লেখার পক্ষে-বিপক্ষে আমার কোন মন্তব্য নেই৷
১। চীফ প্রথমেই সবাইকে ধন্যবাদ দিলেন সেনাবাহিনীর সবাইকে নিরলসভাবে এখন পর্যন্ত কাজ করার জন্য। তিনি বিশ্বাস করেন দেশ ও জাতি আমাদের এই অবদান আজীবন কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করবে। তিনি সবাইকে ধন্যবাদ দিয়েছেন যে এতো প্রভোকেশনের পরেও যে আমরা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি সেজন্য। বললেন *রিএ্যাক্ট করোনা*। *নবীর হাদিসে আছে রাগকে দম’ন করতে হয়*। আমি ভেবে পাইনা উনি এতো কিছুর পরও উনার মধ্যে কোন রা’গ নাই, অ’ভিযোগ নাই! বললেন *আমাদের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হওয়া যাবেনা। আমাদের দায়িত্ব দেশে স্ট্যাবিলিটির মাধ্যমে দেশে জনগনের নির্বাচিত সরকার ব্যবস্থা আনাতে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করা*। ২। দেশ এবং সে’নাবাহি’নীর আইন ও নিয়মনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া ও মেনে চলা। দেশ ও জাতির সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা। বললেন *মনে রাখবা এটা করতে পারাই আমাদের বিজয়। আর এই কাজ করবা সততা, পরিশ্রম, প্রত্যয় ও সহনশীলতার সাথে*। ৩। চিফ বললেন *কোন প্রকার প্রভোকেশনে রিএ্যাক্ট করোনা। আমার সৈ’নিকদেরও বলবে এই কথা। প্রজ্ঞা দিয়ে কাজ করো। দেশ ও জাতি আমাদের কাছে অনেককিছু প্রত্যাশা করে। আর সেটা রক্ষা করা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব*। আমি জানিনা, এতো সহনশীলতা উনি কথা থেকে পান। ৪। ইউএন’র সেক্রেটারী জেনারেল সে’নাপ্রধানের সাথে সাক্ষাতে ইউ এন মিশনে বাংলাদেশ সে’নাবাহিনীর অবদানের জন্য ভূয়সী প্রসংশা সহ ধন্যবাদ জানিয়েছেন। একি সাথে ০৫ আগস্ট ২০২৪ এ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে সে’নাবাহিনীর অনন্য ও পেশাদারী ভুমিকার প্রশংসাও করেন। ৫। সে’নাপ্রধান বলেন, *অ’স্থিতিশীল কোন পরিস্থিতিই দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবেনা। আমাদের মনে রাখতে হবে গনতন্ত্রই আমাদের শেষ ভরসা। আর এই গনতন্ত্রে যিনি নেতা নির্বাচিত হবেন তিনি এই দেশের জন্যই কাজ করবেন। আমাদের সবাইকে দল মত, ধর্ম, বর্ণ ও পেশাভেদে একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে*। আমি ভেবে অবাক হই, বাইরে সবাই উনাকে কি ভাবেন, আর উনি আসলে কি! ৬। এরপর চিফ বললেন সে’নাবাহিনীর মধ্যে একতা নিয়ে। আর সবচেয়ে আবেগাপ্লুত হয়েছি এখানে এসেই। তিনি বললেন, তোমরা সবাই এক থেকো। মনে রাখবা, আমরা যদি এক থাকি, আমাদের ক্ষতি কেউ করতে পারবেনা। আর আমাদের ক্ষতি যদি কেউ না করতে পারে তাহলে আই দেশ ও জনগনের ক্ষতিও কেউ করতে পারবেনা। আমরা সবাই মিলে এই সময়কে সে’নাবাহি’নীর ইতিহাসে সবচেয়ে উজ্জ্বল সময় বানাবো। তোমরা শুধু সৎ থেকো আর সুবিচার করো। দেশ ও জাতি সবার আগে। আমি বিগত বছরগুলোর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পরিসংখ্যান নিয়ে দেখেছি এখন পরিস্থিতি অনেক ভালো আছে এবং আমাদের আরও ভালো করতে হবে। যদিও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাইকলজিকাল ইস্যু আমাদের জনগণকে মাঝে মাঝেই আ’তংকিত করে। এটাকে ম্যানেজ করাও আমাদের দায়িত্ব হায় সেলুকাস! বাইরের মানুষ উনাকে নিয়ে কি ভাবেন, আর আমরা কি দেখি। বিশ্বাস করুন, এক বিন্দু বানিয়ে বলছিনা। ৭। এরপর সে’নাপ্রধান সবাইকে বললেন, *তোমরা কোন কাজে যাওয়ার আগে জেনে বুঝে নেবে কি করতে যাচ্ছ, ঠিক না ভুল। এক্ট ডিসিসিভ। যেখানেই যাবা, কাজ করবে*। ৮। চিফ বলেন, *আমরা আ’হত ছাত্রদের সাপোর্ট করছি। তাদেরকে আমরা সারাদেশের সকল সিএমএইচ’এ বিনামুল্যে চিকিৎসা ও ঔষধ সহ আর্থিক সহায়তা করেছি। খুব শীঘ্রই ৭২ জনকে বড় অংকের আর্থিক সহায়তা করবো। গতকাল আমরা তাদের সাথে ইফতার করেছি ঢাকা’তে। এভাবে সকল ডিভিশনেও ইফতারের আয়োজন করা হবে। আমরা সবাই তাদের যত্ন নেবো, তাদের কাজকে রিকগনাইজ করবো*। আমি ব্যক্তিগতভাবে চিফের এই প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই। ওদের জন্য এই জাতির এখনও অনেক কিছু করার বাকী। ৯। সে’নাপ্রধান এরপর ১০ পদাতিক ডিভিশন’কে ইউএন’র সেক্রেটারী জেনারেল এর রোহিঙ্গাদের সাথে সফল বিশাল ইফতার অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য ধন্যবাদ জানান। ১০। চিফ জানান, *অবসরপ্রাপ্তদের আবেদনের ভিত্তিতে আমরা একটা রিভিউ বোর্ড করেছি। সেখান থেকে বোর্ডের সুপারিশের ভিত্তিতে তাদের জন্য প্রোমোশনসহ ১৫০ কোটির মত কম্পেনসেশন প্রপোজ করেছি। আমি আশাবাদী যে এই কম্পেনসেশন সরকার গুরুত্বের সাথে বিচার করে অনুমোদন দেবেন*। ১১। সত্যি বলতে কি আমি ব্যক্তিগতভাবে সেনাপ্রধানের ধৈর্য দেখে অবাক হই। এতো প্রো’পাগান্ডা আর গু’জবের মাঝেও তিনি এতটা ঠান্ডা থাকেন কিভাবে! তিনি বলেন, *ডি’জইনফরমেশন, মি’সইনফরমেশন, প্রো’পাগান্ডা আর গু’জব হতেই থাকবে। তোমরা ইউনাইটেড থেকো। মনে সংশয়, অনুমান, সন্দেহ রেখোনা। যদি কোনও কিছু নিয়ে সংশয় হয়, কমান্ডের কাছে ক্ল্যারিফিকেশন চাইবে। আমার সৈ’নিকদেরও একি কথা জানিয়ে দেবে। আমরা নিয়মের মধ্যে থেকে কাজ করবো। আমি তোমাদের বলে দেবো কি করতে হবে। কিভাবে করবে তা তোমারা তোমাদের প্রজ্ঞা দিয়ে করবে। কাজ করার সময় আন্ডারকমান্ডকে ফ্লেক্সিবিলিটি দেবে”। ১২। সবশেষে সে’নাপ্রধান বলেন, *আমরা একটা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আল্লাহ যেকোনো সংকটে ধৈর্য ধারন করে কাজ করে যেতে বলেছেন। আমি চাই তোমরা তাই করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদের দেখবেন। আমি জানি অনেকেই সীমা অতিক্রম করে সে’নাবাহিনীর বিরুদ্ধাচরণ করছে। আমরা সেগুলোকে প্রফেশনালি ডিল করবো। তোমরা কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করবেনা, কাউকে মা’রধর করবেনা। আমি চাইনা আমার সে’নাবাহিনীর কাউকে কেউ মন্দ বলুক। রাগকে নিয়ন্ত্রন করতে হবে। Be Professional, সবশেষে তোমাদের সবাইকে ও তোমাদের পরিবারের সবাইকে অগ্রিম ঈদের শুভেচ্ছা। আর মনে রাখবেঃ Restrain..Restrain….Restrain Ethics…..Ethics.. Ethics Justice…..Justice… Justice Passion for the people & for the country……Passion for the people & for the country…..Passion for the people & for the country Forgive…..Forgive….Forgive আল্লাহ পছন্দ করেন। নিশ্চিত থেকো আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন এবং সাহায্য করবেন”। এইসব লিখতে লিখতেই ইউনিফর্মটা রেডি করে নিয়েছি। আবার কাজে যেতে হবে। দেশ ও জাতির জন্য এখনও অনেক কিছু করার বাকী। শুধু সেনাপ্রধানকে কিছু কথা বলতে চাই, *স্যার, আপনার কোথায় আবার পুনঃউদ্যমে কাজে নামছি। পরিবারের সাথে আজও ইফতার বা সেহরি কোনটাই করা হবেনা। আক্ষেপ নাই। আমরা বিশ্বাস করি, এই সেনাবাহিনী ও সকল সেনাসদস্যদের সম্মান যাতে সমুন্নত থাকে আপনি তার জন্য কাজ করে যাবেন। আমরা চাই আপনি সেনাবাহিনীকে সেভাবেই লিড করবেন যাতে এই দেশ ও জাতি আমাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ রাখে*। – নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সেনা কর্মকর্তা