মাগুরা প্রতিনিধি:
মাগুরায় আট বছরের শিশু আছিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেছে আদালত। শনিবার (১৭ মে) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান আলোচিত এই মামলার রায় দেন।
আদালত মামলার প্রধান আসামি হিটু শেখকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন। অন্য তিন আসামি—শিশুটির বোনের জামাতা সজীব শেখ, সজীবের ভাই রাতুল শেখ ও তাদের মা রোকেয়া বেগমকে খালাস দেওয়া হয়।
মামলার পটভূমি
গত ৬ মার্চ মাগুরা শহরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয় শিশু আছিয়া। পরবর্তীতে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। অবস্থার অবনতি হলে ফরিদপুর মেডিকেল ও পরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেওয়া হয়, যেখানে ১৩ মার্চ চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটি মারা যায়.
৮ মার্চ শিশুর মা আয়েশা আক্তার মাগুরা সদর থানায় চারজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মূল আসামি হিটু শেখ ১৫ মার্চ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় এবং ঘটনায় নিজের একক সম্পৃক্ততা স্বীকার করে।
বিচার কার্যক্রম ও রায়
- ১৩ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) আলাউদ্দিন সরদার চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
- ২৩ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু হয়।
- ২৭ এপ্রিল থেকে ৭ মে পর্যন্ত টানা ১২ কার্যদিবসে ২৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়।
- ৮ মে আসামিদের ৩৪২ ধারায় জিজ্ঞাসাবাদ ও ১২-১৩ মে যুক্তিতর্ক শেষে, আজ ১৭ মে রায় ঘোষণা করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, আসামির স্বীকারোক্তি, মেডিকেল রিপোর্ট, সাক্ষীদের জবানবন্দি ও অন্যান্য প্রমাণের ভিত্তিতে হিটু শেখের বিরুদ্ধে অভিযোগ অসন্দিগ্ধভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এ কারণে আদালত তাকে সর্বোচ্চ সাজা প্রদান করেন।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া
এই পাশবিক ঘটনায় মাগুরাসহ সারা দেশে তীব্র গণপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আইনজীবী সমিতি ও সাধারণ মানুষ প্রতিবাদে রাস্তায় নামে। আজকের রায়কে অনেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখছেন।
এই রায় নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি অপরাধীদের কঠোর শাস্তির বার্তা দেবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।