সিনিয়র প্রতিবেদক:
পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ৩০ হাজার ইউনিফর্ম বানানোর বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছে সেনাবাহিনী।
সোমবার (২৬ মে) দুপুরে সেনা সদরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উল-দৌলা।
চট্টগ্রামের একটি কারখানায় সন্ত্রাসী সংগঠন কেএনএফের পোশাক পাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক বলেন, ‘কেএনএফ মূলত বম কমিউনিটিভিত্তিক সংগঠন।
পোশাক পাওয়ার সংবাদটি একটি বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ। সংগঠনটির অস্ত্রের ব্যবহার আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে দেখছি। তাদের আক্রমণে আমাদের কয়েকজন সেনা সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন এবং আহত হয়েছেন। সেই প্রেক্ষাপটে নিশ্চয়ই এটা ভালো কোনো খবর নয়।’
তিনি বলেন, ‘৩০ হাজার ইউনিফর্ম পাওয়ার ছবি দেখার সঙ্গে সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, এটার আসলে ব্যাপারটা কী, এ বিষয়ে আমাদের জানতে হবে। এ পোশাক কাদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল, সেটা আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। এটা নিয়ে কাজ চলছে।
এ সংগঠনের সঙ্গে অন্যদের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। কিন্তু বম কমিউনিটির জনসংখ্যা মাত্র ১২ হাজার। সুতরাং এই ৩০ হাজার ইউনিফর্ম কেএনএফের জন্য ছিল কি না সেটা খুঁজে দেখার সুযোগ আছে।
এ বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি। বিষয়টি দেশের নিরাপত্তার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিষয়টিকে আমরা হালকাভাবে নিইনি, নিশ্চিত করে বলতে পারি। এ ব্যাপারে যতটুকু ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, আমাদের দায়িত্বের মধ্যে যেটা পড়ে, সেটা আমরা করব।’
করিডরের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না এবং এ বিষয়ে সেনাবাহিনী কী ভাবছে–সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘করিডরের বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এটা আমাদের দেশ, আমাদের সবার দেশ।
এই দেশের স্বার্থ ও সার্বভৌমত্বের সঙ্গে আমরা সবাই জড়িত। এ দেশকে ভালো রাখতে আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে। সুতরাং আমি মনে করি না যে এই বিষয়টা এমন একটি পর্যায়ে গেছে, যেভাবে বিষয়টা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
মো. নাজিম-উল-দৌলা বলেন, ‘সরকার ও সেনাবাহিনী খুব সুন্দরভাবে ওতপ্রোতভাবে একে অপরের সম্পূরক হিসেবে কাজ করছে।
আমরা প্রতিনিয়ত সরকারের সঙ্গে কাজ করছি এবং সরকারের নির্দেশে দায়িত্ব পালন করছি। সরকার ও সেনাবাহিনী খুব সুন্দরভাবে একে অপরের সহযোগিতায় কাজ করছে। করিডরের সঙ্গে বর্ডারে আরসার মুভমেন্টের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। দুইটা বিষয় আলাদা।
সরকার ও সেনাবাহিনী ভিন্ন ভিন্ন চিন্তা করছে, এ রকম যেন আমরা না ভাবি। সরকার ও সেনাবাহিনী একসঙ্গে কাজ করছে, ভবিষ্যতেও আমরা আরো সুন্দরভাবে কাজ করে যাব বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’
বাংলাদেশ একটা ছায়া যুদ্ধের মধ্যে আছে, সেটা বিভিন্ন মাধ্যমে বলা হচ্ছে। আরসা বাংলাদেশের লোকজনকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশে ঢুকে তারা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অনেক সময় বিভিন্ন মাধ্যমে খবর আসছে তাদের কাছে ভারি ভারি অস্ত্র আছে, তাদের কাছে এই অস্ত্র কোথায় থেকে আসছে।
এসব বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে আসলে বর্ডার কি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে নাকি আমরা বর্ডার কম্প্রোমাইজ করেছি–এমন প্রশ্নের জবাবে মো. নাজিম-উল-দৌলা বলেন, ‘আমি যদি এক লাইনে উত্তর দিতে চাই, অবশ্যই আমরা বর্ডার কম্প্রোমাইজ করিনি।
যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের গায়ে বিন্দুমাত্র শক্তি থাকবে, আমরা কখনোই বর্ডার কম্প্রোমাইজ করব না। এটা আমাদের দেশ আর দেশকে আমরা যেকোনো মূল্যে রক্ষা করব। এটা আপনার দেশ, এটা আমাদের দেশ। কোনো একটা সম্প্রদায়ের মাধ্যমে এ দেশের সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট হতে পারে, সেটা কখনোই হবে না।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ও মায়ানমার বর্ডার অত্যন্ত জটিল একটি পরিস্থিতির মুখে আছে। মায়ানমারের সরকারের অস্তিত্ব বিলীনের মুখে। আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যটিকে প্রায় দখল করে নিয়েছে। তাদের দখলে রাখাইন রাজ্যের ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ রয়েছে।
আরাকান আর্মি কোনো অথরাইজ সংগঠন নয়। এ জায়গাটাতে না আছে কোনো সরকারের অস্তিত্ব, না আছে আরাকান আর্মিকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টা। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ও মায়ানমারের বর্ডারের পরিস্থিতি যেকোনো সময়ের তুলনায় সংবেদনশীল।
সে ক্ষেত্রে এ সময়ে ওই এলাকায় কিছু সশস্ত্র গ্রুপের মুভমেন্ট করাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তার মানে এই নয় যে এটাকে আমরা স্বীকৃতি দেব বা দেখেও না দেখার ভান করব।
এ ধরনের ঘোলাটে পরিস্থিতিতে এ ধরনের মুভমেন্ট হতে পারে কিন্তু আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, বিজিবি প্রাথমিকভাবে ডেফিনেটলি সাপোর্টেড বাই আর্মি, আমরা এই বর্ডারে প্রচণ্ডভাবে নজরদারি রাখছি।
এখানে যেন সার্বভৌমত্ব বিঘ্নিত হতে না পারে, এমন পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে আমরা ওয়াকিবহাল আছি।’