যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ফলে রপ্তানি খাতে বড় ধরনের চাপের মুখে পড়েছিল ঢাকা। তবে সম্প্রতি মার্কিন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালতের এক রায়ে সেই শুল্ক স্থগিত হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি এসেছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ পাল্টা কূটনৈতিক কৌশল হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা, তেল ও গ্যাসসহ আরও বেশি পণ্য আমদানির প্রস্তাব দিয়েছে, যাতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষা করা যায়।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) জাপানে অনুষ্ঠিত ‘ফিউচার অব এশিয়া’ সম্মেলনের ফাঁকে জাপানি সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে আগ্রহী। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি পণ্য আমদানি করার মাধ্যমে বাংলাদেশ পরিস্থিতিকে হুমকি নয়, বরং একটি কৌশলগত সুযোগ হিসেবে দেখছে।
ড. ইউনূস জানান, বাংলাদেশ প্রতিবছর প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলারের কাঁচা তুলা আমদানি করে, যার বড় একটি অংশ আসে ভারত, উজবেকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তানের মতো মধ্য এশিয়ার দেশগুলো থেকে। তিনি বলেন, এখন আমরা ভাবছি কেন না যুক্তরাষ্ট্র থেকেই তুলা কেনা যায়, যাতে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি কমে এবং মার্কিন উৎপাদকরা আমাদের সহযোগী হয়ে ওঠেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, যুক্তরাষ্ট্রের কটন বেল্টের কংগ্রেস সদস্যরা বাংলাদেশের পক্ষে রাজনৈতিকভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারেন।
এছাড়া, বাংলাদেশের আমদানিকৃত জ্বালানি তেলের বড় অংশ এখন মধ্যপ্রাচ্যনির্ভর হলেও, ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র থেকেই তেল ও গ্যাস কেনার বিষয়টি বিবেচনায় আনা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং শুল্ক হ্রাসের হার বা নির্দিষ্ট সময়সীমা এখনো নির্ধারিত হয়নি। তবে বাংলাদেশ এ মুহূর্তে এটিকে এক ধরনের কূটনৈতিক সম্ভাবনা হিসেবে দেখছে এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে এগোচ্ছে।
অন্যদিকে, ট্রাম্পের আরোপ করা শুল্ক স্থগিত করে মার্কিন আদালত যে রায় দিয়েছেন, তাতে বলা হয়েছে—সংবিধান অনুযায়ী বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কংগ্রেসের, প্রেসিডেন্টের নয়। এই রায়ের ফলে বাংলাদেশসহ অন্যান্য রপ্তানিকারক দেশের জন্য কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।