মাগুরার বহুল আলোচিত শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম মাত্র ২১ কার্যদিবসে শেষ হয়েছে। মামলার রায় আগামী শনিবার (১৭ মে) ঘোষণা করবে আদালত।
আজ মঙ্গলবার (১৩ মে) যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর বিচারক রায়ের দিন নির্ধারণ করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম মুকুল। তিনি বলেছেন, এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ২৯ জন সাক্ষী উপস্থাপন করেছে। আদালত ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় আসামিদের শনাক্ত করা ও তাঁদের বক্তব্য শুনেছেন।
মাগুরা জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসানের আদালতে মামলার শুনানি হয়। দ্বিতীয় দিনের মতো যুক্তিতর্কে অংশ নেন রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। চার আসামিকেই এ সময় আদালতে উপস্থিত রাখা হয়।
মামলাটি গুরুত্ব বিবেচনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অ্যাটর্নি জেনারেলের সমমর্যাদাসম্পন্ন আইনজীবী এহসানুল হক সমাজীকে বিশেষ কৌঁসুলি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। শুনানিতে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, “১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি, মেডিকেল প্রতিবেদন ও সাক্ষ্য মিলিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। আমরা আশা করি, সর্বোচ্চ শাস্তি হবে, যা সমাজে উদাহরণ তৈরি করবে।”
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ এপ্রিল মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। ছুটির দিন বাদে টানা শুনানি চলেছে। আদালতে আসামিদের উপস্থিতিতে এ শুনানি হয়। মামলায় শিশুটির বোনের শ্বশুরকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯/২ ধারায় (ধর্ষণের ফলে মৃত্যুর অপরাধ), শিশুটির বোনের স্বামী ও ভাশুরকে দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারার দ্বিতীয় অংশ (ভয়ভীতি প্রদর্শন) এবং বোনের শাশুড়ির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২০১ ধারায় (অপরাধের আলামত নষ্টের অভিযোগ) অভিযোগ গঠন করা হয়।
গত ১৩ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মাগুরা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলাউদ্দিন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। পরে ১৭ এপ্রিল মামলাটি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয় এবং ২০ এপ্রিল অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হয়। ২৩ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।
গত ১৫ মার্চ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সব্যসাচী রায়ের আদালতে শিশুটির বোনের শ্বশুর ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ৬ মার্চ সকালে ছোট ছেলের কক্ষে (শিশুটির বোনের স্বামীর কক্ষে) শিশুটিকে একা পেয়ে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করেন ।
শিশুটি বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। ৬ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাকে অচেতন অবস্থায় মাগুরার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ১৩ মার্চ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়। এর আগে ৮ মার্চ শিশুটির মা মাগুরা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন।