দেশের জ্বালানি খাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডে (এসএওসিএল) দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিশাল অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় জড়িত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বার্ষিক অডিট প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটির ছয় অর্থবছরের কার্যক্রম পর্যালোচনায় উঠে এসেছে রীতিমতো একটি দুঃস্বপ্নের চিত্র। সেখান থেকে জানা যায়, ২০১৩-১৪ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত ২১টি খাতের মাধ্যমে মোট ৪৭২ কোটি ৭৪ লাখ ৮ হাজার ৫৪৭ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা যৌথভাবে নানা কৌশলে এই বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। আর আশ্চর্যজনকভাবে, এত বড় অঙ্কের দুর্নীতির পরও তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ এখনো গ্রহণ করা হয়নি। অডিট প্রতিবেদনটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও সেটি ধামাচাপা পড়ে আছে বছরের পর বছর।
এসএওসিএলের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও বর্তমানে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) মহাব্যবস্থাপক মণিলাল দাশ, সাবেক হিসাব ও অডিট ব্যবস্থাপক বেলায়েত হোসেন, সহকারী ব্যবস্থাপক আতিকুর রহমান, মংলা অয়েল ইনস্টলেশনের সাবেক কো-অর্ডিনেটর কামরুল হোসেনসহ আরও একাধিক কর্মকর্তা এই অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় সরাসরি জড়িত বলে অডিট প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।
ব্যাংকিং নিয়ম উপেক্ষা করে এলসি খাতের লেনদেনে চেক ইস্যু করে তুলে নেওয়া হয় নগদ ৬৩ কোটি টাকা। আবার, সাবেক ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা কমিটি-ম্যাকের সভাপতি মঈনউদ্দিন আহমেদকে দাপ্তরিক প্রয়োজন দেখিয়ে দেওয়া হয় আগাম নগদ টাকা। পরবর্তীতে তার কাছ থেকে নেওয়া চেক ব্যাংকে জমা না দিয়ে পরের বছর ফেরত দিয়ে দেওয়া হয়, যার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয় প্রায় ৮৭ কোটি টাকা।
আরও অভিযোগ রয়েছে, বিটুমিন ও লুব্রিকেন্ট অয়েল আমদানির নামে এলসির বিপরীতে দেখানো হয়েছে জালিয়াতি। যেমন, বিটুমিন আমদানি ও বিক্রির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে—প্রায় ১ লাখ ৩৪ হাজার ড্রাম বিটুমিনের কোনো অস্তিত্ব নেই, যার বাজারমূল্য প্রায় ৬৯ কোটি টাকা। আবার অনাদায়ী বিক্রির দেখানো অজুহাতে আত্মসাৎ করা হয় অতিরিক্ত ১.৫৬ কোটি টাকা।
এছাড়া, ‘নন অ্যাকাউন্ট পেয়ি চেক’ ইস্যু দেখিয়ে ব্যক্তিগত জীবন বীমার প্রিমিয়াম হিসেবে প্রতিষ্ঠান থেকেই পরিশোধ করা হয় প্রায় ৩৯ লাখ টাকা। এমনকি স্কাই মডার্ন হোমস প্রাইভেট লিমিটেডকে কাজের অনুমোদন দিয়ে বাজার দরের চেয়ে অতিরিক্ত বিল পরিশোধের মাধ্যমে কোম্পানির ক্ষতি করা হয়েছে আরও ১ কোটি টাকার বেশি।
এসব কারচুপির বিষয়গুলো সংরক্ষিত রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক অডিট প্রতিবেদনে, যেখানে সংসদীয় কমিটির সুপারিশ থাকা সত্ত্বেও এখনো কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এদিকে, চলতি বছরের ৪ মার্চ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পৃথক দুটি মামলায় প্রতিষ্ঠানটির তিন কর্মকর্তা সহ আটজনের বিরুদ্ধে প্রায় আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে। মামলার আসামিদের মধ্যে আছেন বেলায়েত হোসেন, কামরুল হোসেন, আতিকুর রহমান ছাড়াও বিভিন্ন কোম্পানির পরিচালক ও চেয়ারম্যান।
বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিউল্লাহ বলেন, “বিষয়টি নোট নিয়েছি, যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।”