ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের শপথ নিয়ে অনিশ্চয়তা ও জটিলতা তৈরি হয়েছে। আদালতের রায়ে বিজয়ী হলেও এখনো শপথ নিতে পারেননি তিনি। সরকার বলছে, বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনায় রয়েছে। অন্যদিকে বিএনপির দাবি, এটি একটি পরিকল্পিত কূটকৌশল, যাতে জনপ্রিয় নেতা ইশরাককে জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়া যায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো গুলিস্তানের নগর ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। তাঁরা ঘোষণা দিয়েছেন, শনিবার সকাল ১০টায় নগর ভবন থেকে সচিবালয় অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল করবেন। যদিও সাপ্তাহিক ছুটির দিন হলেও আগামীকাল সচিবালয় খোলা থাকবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ মার্চ আদালতের রায়ে ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করা হয়। এরপর নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করলেও শপথ অনুষ্ঠান আর এগোয়নি। আইনি জটিলতা উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায়, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা এবং বরিশালের একটি অনুরূপ মামলার তুলনা টেনে সম্ভাব্য আইনি বাধাগুলো খতিয়ে দেখতে।
এদিকে, ইশরাকের শপথে বিলম্বের প্রতিবাদে নগর ভবনের ফটকে তালা দিয়ে অবস্থান নেন শত শত আন্দোলনকারী। ডিএসসিসির অনেক কর্মচারীও এই আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেন। আন্দোলনকারীদের প্ল্যাকার্ডে ছিল— “শপথ নিয়ে টালবাহানা চলবে না”, “আমাদের মেয়র আমরাই বানাব”, “ইশরাক ভাই জনতার মেয়র”।
ইশরাক হোসেন বলেন, “আমি ন্যায়ের পথে লড়ছি। আদালতের রায়ে জয় পেয়েছি। এখন অদৃশ্য মহল থেকে আমার শপথ ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু আমি পিছিয়ে যাব না।”
এই পরিস্থিতিতে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে দেওয়া রায় স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিটও করা হয়েছে। সেই রিটে ট্রাইব্যুনালের বিচারককে শাস্তির দাবিও জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে মামলা করেছিলেন ইশরাক। ৫ আগস্টের পর তিনি তাঁর আবেদন সংশোধন করে নিজেকে বিজয়ী ঘোষণার দাবি জানান। আদালত সেই আবেদন মেনে রায় দেন।
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই শপথ বিলম্ব হচ্ছে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক চক্রান্তে। একই দাবি করেছে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি।
এদিকে খুলনার পরাজিত মেয়র প্রার্থী এস এম শফিকুর রহমানও দাবি করেছেন, তিনিও প্রকৃত বিজয়ী ছিলেন এবং উচ্চ আদালতের রায়ে তাঁর পক্ষে সিদ্ধান্ত এসেছে। তিনি নির্বাচন কমিশনকে সেই রায় বাস্তবায়নের অনুরোধ করেছেন।
এরইমধ্যে বিএনপির আরেক নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন আদালতের রায়ে চট্টগ্রাম সিটির মেয়র হিসেবে শপথ নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। এবার প্রশ্ন উঠেছে—ইশরাক হোসেনের শপথে এত বাধা কেন?
দেখা যাক, আইনি জটিলতার আবরণে চাপা পড়া এই ‘রাজনৈতিক সংকট’ কোন দিকে মোড় নেয়।