Staff Correspondent:
জুলাই-আগস্ট গণহত্যা মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার মে মাসের শুরুতেই শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার সাক্ষাৎকারমূলক এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান।
রোববার (২৭ এপ্রিল) আল জাজিরার বৈশ্বিক নেতাদের সাক্ষাৎকারমূলক অনুষ্ঠান ‘টক টু আল–জাজিরা’য় ‘মুহাম্মদ ইউনূস: রিয়েল রিফর্ম অর জাস্ট আ নিউ রুলিং ক্লাস ইন বাংলাদেশ?’
এ জুলাই বিপ্লব, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়া, তার সরকারের দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন ড. ইউনূস।
শেখ হাসিনার বিচার প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় শেখ হাসিনার সংশ্লিষ্টতা জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। সেই ভিত্তিতেই মে মাসের শুরুতে আনুষ্ঠানিকভাবে তার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে। ’
সাক্ষাৎকারে উপস্থাপক ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করেন, এটি কি বলা ঠিক যে শেখ হাসিনার পতনের পরের ‘মধুচন্দ্রিমা’ এখন সম্ভবত শেষ হয়েছে? কিছু বেশ বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেগুলোর সুনির্দিষ্ট জবাব আপনাকে দিতে হবে।
কারণ পুরোনো ক্ষমতাধরদের প্রভাব রয়েছে, অন্যরা রাজনৈতিক শূন্যতাকে কাজে লাগাতে চাইতে পারে। যেমন—লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। এর সমাধান কি বাংলাদেশ একা করতে পারে?
জবাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘দুটি বিষয়, একটি জনগণের অধৈর্য নিয়ে, তা মধুচন্দ্রিমা শেষ হোক বা না হোক। বাংলাদেশের পরিস্থিতি দেখে মানুষ মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকার এখনো তাদের জন্য ভালো সমাধান। তারা বলছে না, অন্তর্বর্তী সরকারকে যেতে দাও।
আজ আমাদের নির্বাচন। কেউ তা বলেনি। এই দিকেই আমরা যাচ্ছি। আমরা এমন কোনো সমস্যার মুখোমুখি হইনি যেখানে লোকেরা বলছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের হস্তান্তর করো। ’
অন্যদিকে রোহিঙ্গা একটি সম্পূর্ণ পৃথক বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থা, জাতিসংঘের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কাজ করছি এবং এই লোকেরা যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্যও কাজ করছি।
আমাদের চিন্তা হলো, কিভাবে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কিছু বোঝাপড়া তৈরি করা যায়, যাতে রোহিঙ্গারা তাদের নিজেদের বাড়িতে ফিরে যেতে এবং নিরাপদ পুনর্বাসন করতে পারে। ’
সাক্ষাৎকারে বিগত দিনের অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করে দেশে অর্থবহ সংস্কার এবং এযাবৎকালের সেরা নির্বাচন উপহার দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। নির্বাচনের আগে সংস্কারের তালিকা ছোট হলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন এবং তালিকা বড় হলে আগামী বছর জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন তিনি। নির্বাচন জুনের পরে যাবে না বলেও উল্লেখ করেছেন ড. ইউনূস।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে কি না, সে প্রশ্ন করা হলে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই প্রশ্নের জবাবের একটি অংশ আওয়ামী লীগকেই নির্ধারণ করতে হবে। দলটি আগে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে তারা নির্বাচনে যোগ দেবে কি না।
তারা এখনো কিছু ঘোষণা করেনি। ’ তা ছাড়া নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশন কী প্রতিক্রিয়া দেয়, সেটাসহ অন্যান্য বিষয় রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তাহলে প্রধান উপদেষ্টা আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিচ্ছেন কি না, সে প্রশ্ন সাক্ষাৎকারে উঠে আসে।
জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘সেটা নয়। অন্যান্য দল আছে যারা বলতে পারে যে এই আইনের অধীনে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। ’
প্রধান উপদেষ্টার কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি মনে করেন কি না, ভারত শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিকভাবে আশ্রয় দিচ্ছে, যেন দেশে ফিরে তাকে ন্যায়বিচারের সম্মুখীন না হতে হয়। তিনি ভারতের ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি করতে পারবেন কি না?
জবাবে ড. ইউনূস জানান, বাংলাদেশ এরই মধ্যে ভারত সরকারকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে। কিন্তু তারা এখনো কোনো উত্তর দেয়নি। যখন আইনি প্রক্রিয়া শুরু হবে, তখন আদালত তাকে নোটিশ পাঠাবেন এবং তখন দেখা যাবে কিভাবে তাকে ফিরিয়ে আনা যায়।