Staff Reporter :
রাজধানীসহ সারা দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিএনপি, জামায়াত এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ নেতাদের হত্যার পরিকল্পনা করেছিল সুব্রত বাইন এবং তার সশস্ত্র বাহিনী। এই চাঞ্চল্যকর ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতার সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রধান সহযোগী ছিলেন তার ঘনিষ্ঠ শিষ্য আবু রাসেল মাসুদ ওরফে মোল্লা মাসুদ.
বিদেশ থেকে অর্থ, সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতিবেশী এক রাষ্ট্র থেকে হুন্ডির মাধ্যমে বড় অঙ্কের অর্থ পাঠানো হয় এই বাহিনীর কাছে। সেই অর্থ দিয়ে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ভাড়াটে শ্যুটার এবং কিলার নিয়োগ করছিল তারা।
হাতিরঝিলে গ্রেফতার, আদালতে চাঞ্চল্যকর তথ্য
মঙ্গলবার রাতে হাতিরঝিল থানায় হস্তান্তরের পর গোয়েন্দা হেফাজতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। আদালতে শুনানিকালে সুব্রত বাইন বলেন, “সত্য কথা লিখবেন। আমারও পরিবার আছে। আমি মরতে চাইনি, বাঁচার জন্য অস্ত্র রেখেছিলাম।” তিনি দাবি করেন, ২০২২ সালে তাকে “আয়নাঘরে” আটক রেখে নির্যাতন করা হয়েছিল।
আদালতের রিমান্ড আদেশ
ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইন সুব্রত বাইনকে ৮ দিনের ও তার সহযোগীদের ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে পাঠানো অন্য আসামিরা হলেন:
- আবু রাসেল মাসুদ ওরফে মোল্লা মাসুদ
- আরাফাত ইবনে নাসির ওরফে শ্যুটার আরাফাত
- এমএএস শরীফ
পরিকল্পনার গভীরতা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, অস্ত্রগুলো সীমান্ত পেরিয়ে ঢাকায় এনে মগবাজার, শাহবাগ, গুলশান ও বাড্ডার উঠতি বয়সি, এলিট শ্রেণির কিছু অপরাধীদের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। তারা মূলত পুলিশের খাতায় না থাকা “ক্লিন” সদস্যদের নিয়েই একটি সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছিল।
ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও অপপ্রচারের ছক
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বিএনপি, জামায়াত এবং এনসিপির নেতাদের হত্যা করে তা ক্ষমতার দ্বন্দ্ব বলে প্রচারের মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক জোটের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। এতে করে আওয়ামী লীগকে একমাত্র “স্থিতিশীল শক্তি” হিসেবে তুলে ধরা সম্ভব হবে বলেই তাদের ধারণা ছিল।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে মিশনে নামা
সুব্রত বাইন দাবি করেন, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ২৩ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় তার নাম প্রথমে আসে। এরপর দল থেকে পর্যাপ্ত সহায়তা না পাওয়ায় এবং বিএনপি নেতাদের এড়িয়ে যাওয়ায়, তিনি আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করতে বাধ্য হন।
অস্ত্র উদ্ধার ও ক্যাডার ধরতে অভিযান
ডিবি সূত্র জানায়, অস্ত্র, অর্থ এবং বাহিনীর লোকজন শনাক্তে একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ঢাকায় বিভিন্ন স্থানে অস্ত্র পৌঁছে দেওয়ার বিষয়েও তারা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। কুষ্টিয়া, যশোর ও ঝিনাইদহ সীমান্ত থেকে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ এবং অস্ত্রের চালান আসত বলেও তারা স্বীকার করেছে।