ইসরায়েল “অপারেশন রাইজিং লায়ন” নামে একটি বৃহৎ সামরিক অভিযানে ইরানের ওপর শুক্রবার ভোরে একাধিক আক্রমণ চালিয়েছে। এসব হামলায় পারমাণবিক স্থাপনা, সামরিক ঘাঁটি এবং বেসামরিক আবাসিক এলাকা লক্ষ্যবস্তু করা হয়। এতে বহু সাধারণ নাগরিকসহ শিশুরা নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম।

এছাড়া নিহত হয়েছেন ইরানের শীর্ষ সামরিক ও পরমাণু কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। এর মধ্যে রয়েছেন:
– মোহাম্মদ বাঘেরি: ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান। তিনি ইরান-ইরাক যুদ্ধকালীন সময় থেকে IRGC-র সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
– হোসেইন সালামি: বিপ্লবী গার্ড বাহিনী IRGC-এর প্রধান ছিলেন।
– গোলামআলি রাশিদ: ইরানি যৌথ বাহিনীর কমান্ড সেন্টার ‘খাতাম-আল-আনবিয়া’-এর প্রধান।
– আমির আলি হাজিজাদেহ: IRGC অ্যারোস্পেস ফোর্সের প্রধান, যিনি ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির অন্যতম মুখ্য ব্যক্তি ছিলেন।
– ফেরেইদুন আব্বাসি: প্রাক্তন পরমাণু সংস্থা প্রধান ও সংসদ সদস্য।
নিহত হয়েছেন ছয়জন পরমাণু বিজ্ঞানীও। তাঁদের মধ্যে আছেন মোহাম্মদ মেহদী তেহরানচি, আব্দুলহামিদ মিনুচেহর, আহমদ রেজা জোলফাঘারি, আমির হোসেইন ফেগহি—যারা সবাই তেহরানের শীর্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পারমাণবিক প্রকৌশলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করেছে, তারা ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতাকে “মূলে আঘাত” করেছে এবং প্রয়োজনে আরও হামলা চলবে। পাল্টা আঘাতের আশঙ্কায় ইসরায়েল দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে।
ইরান সরকার এখনো কোনো প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের ঘোষণা দেয়নি, তবে টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে একাধিক সামরিক নেতা “উপযুক্ত জবাবের” অঙ্গীকার করেছেন।
নিহত বিশিষ্ট ব্যক্তিরা:
🔹 মোহাম্মদ বাঘেরি
ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ছিলেন। তিনি ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় থেকেই ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (IRGC)-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সম্প্রতি পার্সেপলিসে দেওয়া এক ‘শান্তির পক্ষে’ বক্তব্যের জন্য তিনি রক্ষণশীলদের সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন।
নতুন প্রধান: জেনারেল আবদুররহিম মুসাভি (IRGC নয়, সেনাবাহিনী থেকে আগত)।
🔹 হোসেইন সালামি
IRGC প্রধান ছিলেন। ২০১৯ সাল থেকে দায়িত্বে ছিলেন। ইসরায়েল-বিরোধী কঠোর বক্তব্য ও হুমকির জন্য পরিচিত।
নতুন IRGC প্রধান: মোহাম্মদ পাকপুর।
🔹 গোলামআলি রাশিদ
IRGC-র যৌথ সামরিক পরিকল্পনা সদর দপ্তর ‘খাতাম-আল-আনবিয়া’র প্রধান। ইরান-ইরাক যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।
নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত: আলি শাদমানি।
🔹 আমির আলি হাজিজাদেহ
IRGC এর অ্যারোস্পেস ফোর্সের প্রধান। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির কেন্দ্রীয় ব্যক্তি ছিলেন। ইসরায়েলের দাবি অনুযায়ী, তিনি একটি গোপন আন্ডারগ্রাউন্ড কমান্ড সেন্টারে অন্যান্য বিমান ইউনিট নেতাদের সঙ্গে থাকাকালীন হামলায় নিহত হন।
তিনি ২০২০ সালে ইউক্রেনীয় যাত্রীবাহী বিমান ভুল করে গুলি করে ভূপাতিত করার দায় স্বীকার করেছিলেন।
🔹 ফেরেইদুন আব্বাসি
২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান ছিলেন। পরবর্তীতে পার্লামেন্ট সদস্য হন। সম্প্রতি তিনি টিভিতে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সম্ভাবনা নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন।