দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর মার্চেন্ট নেভিতে কর্মরত অবস্থায় নিহত এরশাদ আলীর নাম লন্ডনের ‘টাওয়ার হিল মেমোরিয়ালে’সংরক্ষিত রয়েছে। তবে ভিসা প্রত্যাখ্যানের ক্ষোভে ও হতাশায় সেই নাম মুছে ফেলতে চায় তার পরিবার।
পরিবারের দীর্ঘদিনের আশা, কিন্তু হতাশার বাস্তবতা
৮৬ বছর বয়সী আতাউর রহমান, যিনি এরশাদ আলীর ছেলে, বাংলাদেশের সিলেটে বসবাস করেন। তিনি ও তার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে নিহত স্বজনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতিস্তম্ভটি পরিদর্শনের আশা করছিলেন। কিন্তু ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে যুক্তরাজ্য সরকার তাদের ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান করে, যা তাদের মনে গভীর ক্ষোভ ও দুঃখের জন্ম দিয়েছে।
আতাউর রহমান বলেন,
“আমার সবচেয়ে বড় আফসোস হলো বাবার সঙ্গে কখনো দেখা না হওয়া। আমার জীবনের শেষ ইচ্ছা ছিল তার স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন করা, কিন্তু ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র দফতরের সিদ্ধান্তের কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছে না।”
পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র দফতর তাদের নাবিক পরিবারের প্রতি অসম্মান ও বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে। এর প্রতিবাদ হিসেবে তারা এরশাদ আলীর নাম স্মৃতিস্তম্ভ থেকে স্থায়ীভাবে মুছে ফেলার এবং তার যুদ্ধের পদকগুলো ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন.
যুদ্ধকালীন আত্মত্যাগ এবং স্বীকৃতি
১৯৪৪ সালের ১৯ জুন, ডাচ পণ্যবাহী জাহাজ এসএস গ্যারোয়েট একটি জার্মান ইউ-বোটের হামলায় ডুবে গেলে এরশাদ আলী প্রাণ হারান। তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পাঁচটি মরণোত্তর পদক দেওয়া হয়:
- বার্মা স্টার
- আটলান্টিক স্টার
- ১৯৩৯-৪৫ স্টার
- ১৯৩৯-৪৫ ওয়ার মেডেল
- ডাচ মোবিলাইজেশন ওয়ার ক্রস
কিন্তু এখন পরিবার মনে করছে, যদি তাদের ভিসা অনুমোদন না দেওয়া হয় এবং তাদের স্বজনকে যথাযথ সম্মান না জানানো হয়, তাহলে এই স্বীকৃতি তাদের কাছে মূল্যহীন।
নাতির সংগ্রাম এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এরশাদ আলীর নাতি সুহেল রানা (৩০) দীর্ঘ তিন বছর ধরে লড়াই করে ২০১৯ সালে দাদার যুদ্ধকালীন অবদানের স্বীকৃতি আদায় করেন। কিন্তু তিনিও নিজ দাদার স্মৃতিসৌধ পরিদর্শনের অনুমতি পাননি।
‘মেডেলস লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’-এর পরিচালক স্টিভ বেলগ্রোভ পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং বলেছেন,
“এটি লজ্জাজনক। যদি পরিবারগুলো তাদের স্বজনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে না পারে, তাহলে কেন তাদের নাম স্মৃতিস্তম্ভে লেখা থাকবে? এই মানুষগুলো আমাদের জন্য প্রাণ দিয়েছে। যুক্তরাজ্য সরকার কমনওয়েলথকে হতাশ করছে।”
Next steps
- আতাউর রহমান যুক্তরাজ্য সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করবেন তার বাবার নাম মুছে ফেলার জন্য.
- পরিবারের সদস্যরা তার বাবার পদকগুলো ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন.
- ব্রিটিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে তাদের পক্ষপাতদুষ্ট নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করা হবে.
এই ঘটনাটি শুধু এক পরিবারের নয়, বরং কমনওয়েলথ দেশগুলোর যুদ্ধকালীন অবদান এবং বর্তমান বাস্তবতার মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরছে। একদিকে, ব্রিটেন তাদের পূর্ববর্তী উপনিবেশগুলোর সৈনিকদের সম্মান দেয়ার দাবি করে, কিন্তু অন্যদিকে, সেই বীরদের পরিবারের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে, যুক্তরাজ্য সরকার কি তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে? নাকি ইতিহাসের এক বীর সেনানীর নাম মুছে ফেলার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার আত্মত্যাগের স্বীকৃতি?