বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ১৫ বছরের শাসনামলে পাচার হওয়া বিপুল অর্থ দেশে ফেরত আনতে ব্যাপক প্রচেষ্টা শুরু করেছেন। ২০২৪ সালে, ছাত্র-জনতার তীব্র বিক্ষোভের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলে, ড. আহসান এইচ মনসুর গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারের বিষয়ে কাজ করছেন।
১১টি প্রভাবশালী পরিবারের বিরুদ্ধে তদন্ত
ড. আহসান মনসুর বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া বিপুল অর্থের অনুসন্ধানে কাজ শুরু করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে ১১টি প্রভাবশালী পরিবারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালাচ্ছে, যারা ব্রিটেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরে কোটি কোটি ডলার পাচারের সাথে জড়িত। একে অপরের সঙ্গে যোগসাজশে এসব পরিবারের বিরুদ্ধে ১৫ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
এই পরিবারের মধ্যে একটি পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে তারা একটি ব্যাংক থেকে প্রায় ৯০ শতাংশ আমানত তুলে নিয়ে গেছে, যার ফলে ব্যাংকটি ভেঙে পড়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
ব্রিটেনে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধার প্রসেস
ড. আহসান মনসুর জানিয়েছেন, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতিমধ্যেই ব্রিটেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কমনওয়েলথ দপ্তর এবং লন্ডনের আইনি সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। তিনি ব্রিটেনকে বিশ্বব্যাপী চুরি হওয়া সম্পদের প্রিয় গন্তব্য হিসেবে চিহ্নিত করেছেন এবং বলেছেন যে, বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া আনুমানিক ২৫ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে ফেরত আনার জন্য তৎপরতা শুরু হয়েছে।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং লন্ডন-দুবাই সম্পত্তি
এছাড়াও, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে লন্ডন ও দুবাইতে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি সম্পত্তি থাকার অভিযোগ রয়েছে। সাইফুজ্জামানের ৩৬০টি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে, যার বেশিরভাগই লন্ডনে। বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন ইতিমধ্যে সাইফুজ্জামানের ৪০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে এবং তাকে দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
গভর্নরের উদ্বেগ এবং পরিকল্পনা
ড. আহসান মনসুর বলেছেন, তিনি পাচারকৃত অর্থ দ্রুত উদ্ধার করতে চান, কারণ সময় নষ্ট হলে অনেক অর্থ হারিয়ে যেতে পারে। তিনি জানান, পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে আরও পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে এবং কাজের জটিলতা ও স্তরের কারণে এই প্রক্রিয়া কিছুটা ধীরগতি লাভ করেছে।
তিনি বলেন, এসব অপরাধী চক্রের মূল হোতাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ সংগ্রহ করার জন্য বিদেশে অর্থ পাচারে সহায়তাকারীদের সঙ্গে দর কষাকষি করার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে। এমনকি হারিয়ে যাওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণারও পরিকল্পনা রয়েছে।
মার্কিন প্রশাসনের পরিবর্তন এবং সমস্যা
এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের সরকার পরিবর্তনের পর পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের কার্যক্রম কিছুটা জটিল হয়ে পড়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) তহবিল স্থগিত করা হলে, বাংলাদেশে কাজ শুরু করার জন্য আইনি সহায়তার সাপোর্ট প্রদানকারী কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করা হয়েছে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজের জন্য একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আল জাজিরা রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান মনসুর বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তা পাচ্ছেন এবং বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন অভিযান এগিয়ে চলছে।