রাজনৈতিক দলগুলো যদি ‘সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ’ গ্রহণ করে, তবে নির্বাচন ২০২৫ সালের ডিসেম্বরেই হতে পারে। তবে ‘বৃহৎ সংস্কার প্যাকেজ’ গ্রহণ করা হলে নির্বাচন ২০২৬ সালের জুনে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
শুক্রবার (১৪ মার্চ) ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ তথ্য জানান।
নির্বাচন ও সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা
প্রধান উপদেষ্টা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। বৈঠকে জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস বলেন, “আমরা আপনাদের সংস্কার প্রচেষ্টাকে সমর্থন দিতে এখানে এসেছি। এটি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করবে।”
অধ্যাপক ইউনূস জানান, অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের রিপোর্টের বিষয়ে ইতোমধ্যে প্রায় ১০টি রাজনৈতিক দল মতামত জমা দিয়েছে। একবার দলগুলো একমত হলে তারা ‘জুলাই সনদে’ স্বাক্ষর করবে, যা গণতান্ত্রিক উত্তরণ, নির্বাচন, বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন, দুর্নীতি দমন ও পুলিশ সংস্কারের রূপরেখা হিসেবে কাজ করবে।
রোহিঙ্গা সংকট ও মানবিক সহায়তা
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, “আমি রমজান মাসে বাংলাদেশে এসেছি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রতি সংহতি জানাতে।”
কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে ১২ লাখ রোহিঙ্গার মানবিক সহায়তা হ্রাস নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “পৃথিবীতে এতটা বৈষম্যের শিকার অন্য কোনো জনগোষ্ঠী আমি দেখিনি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের ভুলতে বসেছে।”
তিনি আরও বলেন, “মানবিক সহায়তা হ্রাস করা একটি অপরাধ। পশ্চিমা দেশগুলো প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়াচ্ছে, অথচ বিশ্বজুড়ে মানবিক সহায়তা সংকুচিত হচ্ছে।”
অধ্যাপক ইউনূস রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের সহযোগিতা চান। তিনি বলেন, “আমরা রোহিঙ্গাদের দুর্দশার প্রতি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছি।”
বাংলাদেশের অর্থনীতি ও উন্নয়ন পরিকল্পনা
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, পূর্ববর্তী সরকারের রেখে যাওয়া অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে তার সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে।
তিনি জানান:
- রফতানি বৃদ্ধি পাচ্ছে
- বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী হয়েছে
- বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (LDC) তালিকা থেকে বেরিয়ে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে
এছাড়া, বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সাথে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে চায় এবং আসিয়ানের সদস্যপদ লাভের জন্য কাজ করছে।
শান্তিরক্ষা ও ভূ-রাজনীতি
জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, “বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
বৈঠকে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা (SAARC), বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশের সাথে সম্পর্ক, এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে নতুন বন্দর নির্মাণ প্রকল্প নিয়েও আলোচনা হয়।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন:
- জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রাবাব ফাতিমা
- বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুইন লুইস
- পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন
- প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা বিষয়ক প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান
জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস বলেন, তিনি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাবেন এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা সংগ্রহকে অগ্রাধিকার দেবেন।