প্রতিবেদন:
দীর্ঘ দেড় বছর স্থিতিশীল থাকার পর বাংলাদেশে আবারও বাড়তে শুরু করেছে করোনা সংক্রমণ। পুরোনো ধরন অমিক্রনের দুটি শক্তিশালী উপধরন—এক্সএফজি ও এক্সএফসি—দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে দেশে। এতে করে নতুন করে উদ্বেগ বাড়িয়েছে স্বাস্থ্যখাত ও জনসাধারণের মধ্যে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি জুন মাসের প্রথম দশ দিনেই ৪০ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন ১৩ জন। অথচ এপ্রিল মাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫০-এর নিচে। মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৬ জনে। সব মিলিয়ে দেশে এ পর্যন্ত করোনা রোগীর সংখ্যা ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৬০ জনে পৌঁছেছে।
সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দেশের সব প্রবেশপথ—স্থল, নৌ ও আকাশপথে সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। থার্মাল স্ক্যানার ও হ্যান্ডহেল্ড থার্মোমিটারের মাধ্যমে যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা মাপার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হেলথ স্ক্রিনিং বাড়ানোর পাশাপাশি জনসচেতনতা তৈরিতে প্রচারও চালানোর কথা বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. হালিমুর রশিদ জানান, করোনা প্রতিরোধে হাসপাতালগুলোকে পুনরায় প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। অনেক হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার কিট মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ায় নতুন করে কিট কেনার প্রক্রিয়া চলছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঈদুল আজহায় রাজধানী থেকে মানুষের ব্যাপক যাতায়াত সংক্রমণ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। রোগতত্ত্ববিদরা বলছেন, সংক্রমণের ধারা দেখে মনে হচ্ছে জুনের শেষ দিকে ব্যাপক হারে রোগী বাড়তে পারে। এ অবস্থায় পরীক্ষা বাড়ানো, ঝুঁকিপূর্ণ ও বয়স্কদের টিকা দেওয়া জরুরি।
সরকারের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) তথ্য অনুযায়ী, সরকারের হাতে বর্তমানে ৩১ লাখ ডোজ ফাইজারের টিকা মজুত রয়েছে, যার বেশিরভাগের মেয়াদ শেষ হবে আগামী আগস্টে।
আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন জানান, অমিক্রনের নতুন ধরন দ্রুত ছড়ালেও তা এখনো প্রাণঘাতী হয়ে ওঠেনি। তবু সতর্ক থাকা জরুরি। তিনি বলেন, “সংক্রমণ যত কম ছড়ায়, ততই ভালো। বেশি ছড়াতে থাকলে ভাইরাসটি প্রাণঘাতী রূপ নিতে পারে। তাই টিকা নেওয়া, মাস্ক পরা, হাত ধোয়া এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অপরিহার্য।”
এছাড়া ভারতসহ আশপাশের কিছু দেশে করোনা সংক্রমণের নতুন ধরন এনবি ১.৮.১ ছড়িয়ে পড়ায় বাংলাদেশ সরকার এসব দেশে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে।
সব মিলিয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক না হলেও অবহেলা করা চলবে না। প্রস্তুতি, প্রতিরোধ এবং জনসচেতনতার মাধ্যমে আগেভাগেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে সম্ভাব্য সংকট।