স্টাফ রিপোর্টার , ফরিদপুর:
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসার বাবুর্চি ছিলেন মো. মোশারফ শেখ (৪৭)। এক সময়ের দরিদ্র পরিবারের সন্তান মোশারফ আজ কয়েক শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক। শুধু তাই নয়, তার বিরুদ্ধে রয়েছে জমি দখল, সাধারণ মানুষকে হয়রানি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের একাধিক অভিযোগ।
স্থানীয়রা বলছেন, মোশারফ শেখ ছিলেন ফরিদপুরের সালথা উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়নের বড় কামদিয়া গ্রামের কৃষক রহমান শেখের ছেলে। দিনমজুর বাবার সন্তান মোশারফ নিজেও শুরুতে স্থানীয় একটি হোটেলে বাবুর্চির কাজ করতেন। কিন্তু ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবনে বাবুর্চির চাকরি পেয়ে তার ভাগ্য বদলে যায়।
‘পিয়ন এখন ৪০০ কোটির মালিক’—প্রধানমন্ত্রীরই বক্তব্য!
প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সময় শেখ হাসিনাকেই একাধিকবার বলতে শোনা গেছে—”আমার বাসায় যে পিয়ন ছিল, সে এখন ৪০০ কোটির মালিক!” রাজনৈতিক অঙ্গনে এই বক্তব্যটি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। সেই পিয়ন বা বাবুর্চিই যে মোশারফ শেখ—এমন ধারণাই এখন তৈরি হয়েছে ফরিদপুরের স্থানীয়দের মাঝে।
সম্পদের পাহাড়, অভিযোগের ছড়াছড়ি
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, মোশারফ ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে কামদিয়া গ্রামে ২ বিঘা জমির ওপর বিলাসবহুল বাড়ি, মাঠে ৩ বিঘা জমি, ফরিদপুর শহরের হাড়োকান্দিতে ১২ শতাংশ জমিতে বাড়ি, এবং রাজবাড়ী রোড মোড়ে আরেকটি বাড়ি গড়ে তুলেছেন। এছাড়া তার রয়েছে ঢাকা ও ফরিদপুরে একাধিক ফ্ল্যাট, গাড়ি ও প্লট।
এছাড়া নিজ এলাকায় প্রভাব খাটিয়ে সাধারণ কৃষকদের জমি দখল করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। চাঁনমিয়া ফকির নামের এক কৃষক অভিযোগ করেছেন, তার ৪২ শতাংশ জমি জোরপূর্বক দখল করে ঘর নির্মাণ করেন মোশারফ। প্রতিবাদ করলেই হুমকি, মামলা ও মারধরের শিকার হন তারা।
চাঁনমিয়ার ভাতিজা সেন্টু ফকির জানান, “ঘরের ছাদের উপর একটি নৌকা বানিয়ে টানিয়ে রেখেছেন যেন বোঝাতে পারেন তিনিই এখানকার রাজা! আমরা প্রশাসনের কাছে গিয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি।”
জমি দখলের লিখিত অভিযোগ তদন্তে পুলিশ
সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান বলেন, “মোশারফ শেখের বিরুদ্ধে জমি দখলের একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
গা ঢাকা দিয়েছেন মোশারফ, ফোন বন্ধ
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন মোশারফ। তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে এবং গ্রামের বাড়িতেও তাকে পাওয়া যায়নি। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
স্থানীয়দের দাবি, ‘সরকারি তদন্ত হোক’
মোশারফের প্রতিবেশী মো. জামাল শেখ বলেন, “আলাদিনের চেরাগ পেয়েছিল যেন। সরকার বা দুদক তদন্ত করলেই বোঝা যাবে সে কীভাবে এই সম্পদের মালিক হয়েছে।”