এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, হাজারো প্রাণ আর রক্তের স্রোত মাড়িয়ে যে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে, তার প্রধান আকাঙ্ক্ষা ছিল একটি ফ্যাসিবাদমুক্ত রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা। কিন্তু আজও একচ্ছত্র ক্ষমতার চর্চা ও পুরনো ধাঁচের সাংবিধানিক নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু থাকলে কোনো প্রকৃত সংস্কার সম্ভব নয়। তিনি বলেন, “হাসিনার আমলের মত ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ চলতে থাকলে, তা সংস্কার নয় বরং ফ্যাসিবাদকে টিকিয়ে রাখারই নামান্তর।” বুধবার রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এসব কথা বলেন তিনি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এই বৈঠকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি ও সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এবি পার্টির পক্ষে অংশ নেন দলের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার সানী আব্দুল হক।
রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি প্রসঙ্গে মঞ্জু বলেন, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও পক্ষপাতহীনতা—এই মূল্যবোধগুলোকে কেন্দ্র করে সকল পক্ষের অভিপ্রায়কে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব। কিন্তু শুধুমাত্র ভাষাগত পার্থক্যের অজুহাতে এই মৌলিক বিষয়ে এখনো ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি বলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। মঞ্জু বলেন, “আমাদের আলোচনার মূলনীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে—‘কোনো বিষয়ে একমত না হওয়া’। যা অত্যন্ত হতাশাজনক।”
সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ নিয়ে তিনি বলেন, অতীতে শেখ হাসিনা দলীয়করণের মাধ্যমে যেভাবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছেন, সেটিই যেন আবার টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে। যদি কোনো দল এখনো পুরনো প্রক্রিয়া সমর্থন করে, তাহলে তারা আসলে ফ্যাসিবাদী কাঠামো ভাঙতে চায় না বলেই প্রতীয়মান হয়। এবি পার্টির দাবি, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা আনতে হবে, যাতে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে দলীয় আনুগত্য নয়, যোগ্যতা ও পেশাগত নীতিই মুখ্য হয়।
বৈঠকে ব্যারিস্টার সানী আব্দুল হক বলেন, সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ নিয়োগ কমিটির গঠন হলে রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতা খর্ব হবে—এমন ধারণা ভিত্তিহীন। বরং এর মাধ্যমে নির্বাহী বিভাগকে আরও জবাবদিহির আওতায় আনা যাবে এবং প্রতিষ্ঠানগুলো পাবে গণতান্ত্রিক স্বচ্ছতা। তিনি জোর দেন রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর, যাতে তারা নিজ নিজ মতাদর্শের চেয়ে বৃহত্তর ঐকমত্যকে গুরুত্ব দেয়। নতুবা, তার ভাষায়, “জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা শুধু স্লোগান হয়েই থেকে যাবে, বাস্তবায়ন হবে না।”
এই বক্তব্যগুলো শুধু একটি দলের অবস্থান নয়, বরং বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কার ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নিয়ে চলমান বিতর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করে।