ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি দ্রুত নির্বাচন কমিশনকে জানাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। ১৬ জুন রাজধানীতে নাগরিক ঐক্যের উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক রূপান্তরের লক্ষ্যে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষ করে লন্ডনে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক বৈঠকে নির্বাচনসংক্রান্ত যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা নির্বাচন কমিশনে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো দরকার, যেন কমিশনও তার প্রস্তুতি নিতে পারে এবং জনগণের সামনে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করতে পারে।
এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, নির্বাচন কমিশন যদি সরকারের কাছ থেকে পরামর্শমূলক বা নির্দেশনামূলক কোনো বার্তা পায়, তাহলে তারা গণমাধ্যমে ও জনগণের সামনে স্পষ্টভাবে অবস্থান জানাতে পারবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের প্রধান নাসির উদ্দিন বলেছেন, লন্ডন বৈঠকের বিষয়ে তিনি শুধুই সংবাদমাধ্যম থেকে জেনেছেন এবং সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো অফিসিয়াল চিঠি বা নির্দেশনা পাননি। এমনকি যেসব যৌথ বিবৃতি প্রকাশ হয়েছে, সেগুলোরও কোনো স্বাক্ষর নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, লন্ডনের আলোচনায় কারো দায়মুক্তির বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংবিধান অনুযায়ী গঠিত হয়েছে এবং সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শের ভিত্তিতেই উপদেষ্টা পরিষদ কার্যকর রয়েছে। তবে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, উপদেষ্টারা যেহেতু মন্ত্রীর মর্যাদা ভোগ করছেন, তাই সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তাদের যোগ্যতা সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রয়োজন, যেখানে দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণের বিষয়টি অনুমোদিত নয়।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই অন্তর্বর্তী সরকারকে পরবর্তী নির্বাচিত সংসদে অনুমোদন নিতে হবে—এটা একটি সাংবিধানিক শর্ত। সেই রেটিফিকেশন কোথায় এবং কীভাবে হবে, তা আগেই ভাবতে হবে। এতে ভবিষ্যতের কোনো জটিলতা এড়ানো সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিনিধিদের বৈঠকে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে, রমজানের আগে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের একটি প্রাথমিক সম্মতি হয়। সেখানে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এপ্রিলে নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা থাকলেও প্রয়োজনীয় অগ্রগতি অর্জিত হলে ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হতে পারে। বিষয়টি নিশ্চিত করে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান জানান, এ নির্বাচন বাস্তবায়নে বিচার ও সংস্কারের বিষয়গুলোতে দ্রুত অগ্রগতি অর্জন করতে হবে।
আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ছাড়াও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, ভাসানী জনশক্তি পার্টির শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল এবং নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার বক্তব্য রাখেন। বক্তারা বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা, অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন ও নির্বাচনকালীন প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন এবং আগামী বাজেটেও জনগণের কল্যাণে স্পষ্ট পরিকল্পনা রাখার আহ্বান জানান।