অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঘোষিত বাজেট নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছে এবি পার্টি। দলটির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এবারের বাজেট বাস্তবতা বিবর্জিত, আমলা নির্ভর এবং আগের ফ্যাসিবাদী সরকারের ধারাবাহিকতায় তৈরি। তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ পতনের পর জাতি একটি নতুন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বন্দোবস্তের প্রত্যাশা করেছিল, কিন্তু এই বাজেট সেই আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে। বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা না করায় তিনি এটিকে অন্যায্য বলে আখ্যায়িত করেন। কারণ আগামী নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারকেও এই বাজেট বাস্তবায়নের দায় নিতে হবে, আংশিক হলেও। ফুয়াদ বলেন, বাজেটের আকার, প্রণয়ন পদ্ধতি, আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য, ঋণনির্ভরতা, এমনকি বাজেট বর্ষ নিয়েও পুনঃমূল্যায়ন প্রয়োজন। অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড় করানোর মতো দিকনির্দেশনামূলক কিছুই এই বাজেটে নেই, যা আন্তরিকতার অভাবকেই প্রমাণ করে।
তিনি আরও বলেন, গত ১৬ বছরে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটের যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, সেখানে আমলারা কৃত্রিম খরচের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে অদক্ষ ও অযোগ্য লোকবল ঢুকিয়ে সেগুলোকে প্রায় অকেজো করে ফেলা হয়েছে। এবি পার্টি বিশ্বাস করে, এই পরিস্থিতির পরিবর্তন প্রয়োজন। এজন্য বাজেটকে জাতীয় সক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে এবং বিশ্ব কর্পোরেটদের ইচ্ছার বাইরে গিয়ে স্বনির্ভরতার দিকে এগোতে হবে।
তিনি অভিযোগ করেন, এবারের বাজেটও মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রণয়ন করা হয়েছে। আইএমএফের চাপে জনগণের উপর করের বোঝা বাড়ানো হয়েছে। অথচ যেসব তথ্যের ভিত্তিতে বাজেট তৈরি, সেই জিডিপি হিসাবকেই দেশের অর্থনীতিবিদরা ‘অলিক’ বলে অভিহিত করেছেন। তাহলে এই ভিত্তি মেনে পরিকল্পনা তৈরি কতটা যৌক্তিক, সে প্রশ্নও উত্থাপিত হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, অর্থ উপদেষ্টা নিজেই বলেছেন যে গতানুগতিক বাজেট ছাড়া উপায় ছিল না। এটি যেমন বাস্তব, তেমনি এটাও সত্য যে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে জনতুষ্টির ফাঁকা বুলি নয়, বরং অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড় করানোর সাহসী দিকনির্দেশনা প্রত্যাশিত ছিল, যা ব্যর্থ হয়েছে। তবে বাজেটের আকার কমানোকে তিনি সাহসী সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করেন। অর্থ উপদেষ্টার বাজেটের ব্যাকরণ ও দর্শন পুনঃমূল্যায়নের উদ্যোগের কিছু ইঙ্গিত থাকলেও সেটিকে যথেষ্ট মনে করছেন না এবি পার্টি।
বাজেটে এলডিসি উত্তরণ সংক্রান্ত প্রস্তুতি থাকলেও, বাস্তব সক্ষমতা অর্জনের কোনো দিকনির্দেশনা নেই বলে দলটি মনে করে। বাজেটে কাস্টমস ডিজিটাইজেশনের কথা বলা হলেও, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা, খেলাপি ঋণ ও অর্থপাচার রোধে কোনো সুস্পষ্ট রূপরেখা না থাকা, মূল্যস্ফীতি বা প্রবৃদ্ধি মোকাবিলায় কোনো কার্যকর রোডম্যাপ না থাকায় এটিকে দায়িত্বজ্ঞানহীন বাজেট বলেই মনে করে এবি পার্টি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, এবিএম খালিদ হাসান, আমিনুল ইসলাম এফসিএ, সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী নাসির, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল হালিম খোকন, নারী নেত্রী রাশিদা আক্তার মিতু, শাহীনুর আক্তার শীলা, তোফাজ্জল হোসেন রমিজ, আবু রায়ান আশয়ারি রছি, বারকাজ নাসির, সফিউল বাসারসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর পর্যায়ের শীর্ষ নেতারা। দলটি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, সংস্কার ও বাস্তবতার ভিত্তিতে জনবান্ধব বাজেট ছাড়া অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়।