একই ব্যক্তি সরকার প্রধান, দলের প্রধান এবং সংসদ নেতা হতে পারবেন না—ঐক্যমত কমিশনের এই প্রস্তাবে দ্বিমত জানিয়েছে বিএনপি। রোববার ঐক্যমত কমিশনের সঙ্গে এক বৈঠকের মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের জানান, তারা এই বিষয়ে ‘উন্মুক্ত অবস্থান’ বজায় রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন।
সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, “আমরা পৃথিবীর কোথাও দেখি না—এমন কোনো চর্চা যেখানে সরকার প্রধান ও দলীয় প্রধান পৃথক। বরং যুক্তরাজ্যসহ অনেক গণতান্ত্রিক দেশে পার্টি প্রধানই সরকার প্রধান হন। এটি একটি স্বীকৃত গণতান্ত্রিক পন্থা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়। যদি জনগণ কোনো দলকে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আনে, সেটাই হবে প্রকৃত গণতন্ত্র।”
বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, কমিশনের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে, কিছু বিষয়ে মতৈক্য হয়েছে, আবার কিছু বিষয়ে দ্বিমত রয়ে গেছে—যা গণতান্ত্রিক পরিবেশে স্বাভাবিক। তিনি বলেন, “আমরা বাকশালের চিন্তাধারায় বিশ্বাস করি না, যেখানে সবাইকে একই মত মানতে হয়। মত-পার্থক্য থাকবে, সেটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।”
আলোচনায় সংবিধান সংশোধনের বিষয়েও বিএনপি তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। তারা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। সালাউদ্দিন আহমদ জানান, “ওই সংশোধনীতে ধর্মনিরপেক্ষতা বা বহুত্ববাদ নেই। তবে কমিশনের প্রস্তাবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে থাকা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের নীতিগুলো অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে, আমরা তা সমর্থন করেছি।”
তথ্যপ্রযুক্তি ও নাগরিক অধিকার প্রসঙ্গে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট করে তিনি বলেন, “আমরা একমত যে, ইন্টারনেট নাগরিকের মৌলিক অধিকার হওয়া উচিত। তবে মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে রাষ্ট্রের আর্থিক সক্ষমতাকেও বিবেচনায় নিতে হবে। তাই আমরা বলেছি—যেসব প্রস্তাব বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলোই সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।”
এই আলোচনাগুলোকে সামনে রেখে রাজনৈতিক সংস্কারে নতুন ধারা তৈরির আশাবাদ দেখা যাচ্ছে, যেখানে মতপার্থক্যের মধ্য দিয়েই একটি বাস্তবসম্মত সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হবে।