হুমায়ন কবির মিরাজ: যশোর ৮৫-১ (শার্শা) আসনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক উত্তাপ তীব্র হয়ে উঠেছে। যদিও নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করেনি, তবুও বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে নেমে সক্রিয় প্রচারণা চালাচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিএনপির অভ্যন্তরীণ মনোনয়ন যুদ্ধে চার নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, যা দলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী একক প্রার্থী নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। আর ৫ আগস্ট পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকায়, যশোর ৮৫-১ আসনে নির্বাচনী যুদ্ধ বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
এরআগে, বিগত ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ ৭, বিএনপি ৩ এবং জামায়াত ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১ বার করে জয়ী হয়।
আওয়ামী লীগ: ১৯৭৩, ১৯৯১, ১৯৯৬ সালে (তবিবর রহমান সরদার), ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪ সালে (শেখ আফিল উদ্দিন)। বিএনপি: ১৯৭৯ সালে (আলী তারেক), ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি (মফিকুল হাসান তৃপ্তি), ২০০১ সালে (আলী কদর)। জামায়াত: ১৯৮৬ সালে (নূর হুসাইন)। স্বতন্ত্র: ১৯৮৮ সালে (কেএম নজরুল ইসলাম) নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন।
বর্তমানে যশোর-১ আসনে মোট ২ লাখ ৯৪ হাজার ৬৯২ জন ভোটার রয়েছে। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার: ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭৬ জন, মহিলা ভোটার: ১ লাখ ৪৭ হাজার ১১৪ জন, হিজড়া ভোটার: ২ জন।
তবে ৫ আগস্টের পরের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আসনে রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে গেছে। আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্ররা মাঠে নেই। ফলে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি, জামায়াত ও সমমনা দলগুলো নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে মরিয়া।
যশোর-১ (শার্শা) আসনে ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও দলটির সাবেক কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি। আবারও তিনি ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে চান। তবে তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়েছেন শার্শা উপজেলা বিএনপির প্রধান উপদেষ্টা খায়রুজ্জামান মধু, উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হাসান জহির ও সাধারণ সম্পাদক নূরুজ্জামান লিটন। এই চারজনই দলের মনোনয়ন পেতে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন। তারা জনগণের কাছে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন এবং সাংগঠনিক কর্মসূচিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন।
নির্বাচন নিয়ে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে বলছেন, তাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। বিশেষত, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপির মধ্যে বিভাজন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মফিকুল হাসান তৃপ্তি ও আবুল হাসান জহিরের সমর্থকদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একাধিক সংঘর্ষ হয়েছে, যা দলের ভিতরে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
হাসান জহির বলেন, “ছাত্রজীবন থেকেই জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ১৯৮০ সালে নাভারণ ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি, ১৯৮১ সালে থানা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলাম। ১৯৯২ ও ১৯৯৭ সালে নাভারণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই। উপজেলা বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছি— ১৯৯২ সালে গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক, ১৯৯৭ সালে সংগঠনিক সম্পাদক, ২০০৮ সালে সাধারণ সম্পাদক এবং সর্বশেষ ২ ফেব্রুয়ারি শার্শা উপজেলা বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছি। সাড়ে ১৫ বছর আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে ছিলাম, নাশকতার ৪৪টি মামলার মুখেও নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছি, কখনো পিছু হটিনি। তৃণমূল চায়—যে নেতাকে তারা সবসময় পাশে পায়, দল তাকেই মনোনয়ন দিক।”
বিএনপির অন্য প্রার্থী খায়রুজ্জামান মধু বলেন, আমি বিএনপি’র প্রতিষ্ঠানগ্ন জাগো দল থেকে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। অন্যদের মতো কখনো বিএনপি ছাড়া অন্য কোন দলের সাথে সম্পৃক্ত হয়নি। “আমার বিরুদ্ধে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ নেই। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষকে বিজয়ী করবে। মনোনয়ন প্রসঙ্গে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে সব নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধানের শীষকে বিজয়ী করবে।”
এদিকে যশোরের সংসদীয় আসনে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মাওলানা আজিজুর রহমান রাজনৈতিক কার্যক্রমে জোর দিয়েছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রায় ৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হওয়ার পর এবার তিনি আবারও নির্বাচনী মাঠে আছেন। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকারে সাড়ে ১৫ বছর সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে না পারলেও, আমাদের নিরব কার্যক্রম চলেছে। আগামী নির্বাচনে মানুষের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি। জামায়াতে ইসলামীর প্রতি মানুষের সমর্থন বাড়ছে, তারা দুর্নীতিমুক্ত সমাজ চাইছে।”