বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ৯১ ভাগ মুসলমানদের দেশে অবশ্যই শিক্ষা হতে হবে ধর্মের ভিত্তিতে এবং ধর্মীয় চেতনাকে ধারণ করে। এর বাইরে কোন শিক্ষা মানুষকে মানুষ বানাতে পারবে না, দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরি করতে পারবে না। যা এখন প্রমাণিত সত্য।
রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন আয়োজিত শিক্ষক প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ফেডারেশনের সভাপতি ও বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এম কোরবান আলীর সভাপতিত্বে এবং ফেডারেশনের জেনারেল সেক্রেটারি অধ্যাপক এবিএম ফজলুল করীমের সঞ্চালনায় সম্মেলনে জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
জামায়াত আমির বলেন, আল্লাহ যদি কখনো এই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেন, তাহলে আমাদের প্রথম দায়িত্ব হবে শিক্ষার সংস্কার সাধন করা। শিক্ষককে শিক্ষকের মর্যাদার আসনে বসানো আর ছাত্রদেরকে দেশ গড়ার কারিগর হিসেবে গড়ে তোলা হবে। যাতে একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষা শেষে যেভাবে কাগজে সার্টিফিকেট আসবে তেমনি আসবে কাজের অফার লেটার। এ দুটো একসাথে তার হাতে পৌঁছাবে। আমরা নৈতিক শিক্ষাকে বিকশিত করে ওই শিক্ষাকেই এ দেশে প্রতিষ্ঠিত করবো ইনশাআল্লাহ। তাহলে মানুষগুলো আর পশু হবে না।
তিনি বলেন, এ সমাজে হৃদয়বিদারক অনেক কথা দেখতে হয়, শুনতে হয়। হৃদয় ভেঙ্গে টুকরা হয়ে যায়। মাগুরায় ৮ বছরের শিশুর সঙ্গে তার আপনজনরা বিশ্বাসে ছুরিকাঘাত করে যে আচরণ করেছে, এটা গোটা মানবতার প্রতি তারা ছুরিকাঘাত করেছে। এটি হচ্ছে পশুত্বের শিক্ষা। এই শিক্ষা থেকে বের করে আমরা আল্লাহর দেয়া মানবিক শিক্ষা দিতে চাই। ৯১ ভাগ মুসলমানদের এ দেশে অবশ্যই শিক্ষা হতে হবে ধর্মের ভিত্তিতে এবং চেতনাকে ধারণ করে। এর বাইরে কোন শিক্ষা মানুষকে মানুষ বানাতে পারবে না, দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে তৈরি করতে পারবে না। যা এখন প্রমাণিত সত্য। পবিত্র রমজানে সবাইকে কোরআনকে ধারণ করার আহ্বান জানান তিনি। কোরআন শুধু মুসলমানদের নয় গোটা বিশ্বের সম্পদ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ইসলাম হচ্ছে একটি জ্ঞানভিত্তিক জীবন বিধান। জ্ঞানের আয়াত দিয়েই আল্লাহ তায়ালা কোরআন নাজিল শুরু করেছেন। আর রাসুল (সা.) নিজের পরিচয় দিয়ে বলেছেন, আমাকে শিক্ষক হিসেবে পাঠানো হয়েছে। তিনি মানবতার মহান শিক্ষক ছিলেন। শ্রেষ্ঠতম শিক্ষক ছিলেন।
তিনি বলেন, সমাজের যত বড় ব্যক্তিই হোন না কেন, শিক্ষকদের কাছে শিশু তুল্য। এই শিশুদের কাছে আপনাদের দাবি তুলতে হয় কেন? কারণ হলো-যে শিক্ষা দিয়েছেন সেটা আসল শিক্ষা ছিল না। সে আপনাকে শিক্ষার জন্য সম্মান করে না, সম্মান করে আল্লাহর দেয়া মানবিক সহজাত প্রবৃদ্ধির কারণে। মানব প্রবৃদ্ধির গুপ্তধনকে বাইরে নিয়ে আসার নাম হচ্ছে শিক্ষা। আমরা সেটা পারিনি বলেই আজকে ছাত্রদের দুয়ারে শিক্ষকদের দাবি এভাবে পেশ করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, এমন শিক্ষা আনতে হবে, যাতে দাবি আদায়ের কোন প্রয়োজন হবে না। শিক্ষিতরা মনে করবে না যে, আমার মেধা আমার বাপের সম্পত্তি, আমি এ পর্যায়ে এসেছি। বরং সে আল্লাহকে ভয় করবে। কারণ এ শিক্ষা আমাকে না দিয়ে একজন সাধারণ শ্রমিক বা মানুষকে দিতে পারত। আমি শুধু বাপের টাকায় এই লেখাপড়া করিনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব স্থাপনায় আপামর জনগণের অংশগ্রহণ আছে। সুতরাং আমরা সমাজের প্রতিটি মানুষের কাছে দায়বদ্ধ।
শিক্ষকদের দুটি দাবি গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, শিক্ষা জাতীয়করণ করতে হবে এবং যারা এমপিওভুক্ত হয়নি তাদের এমপিওভুক্ত করতে হবে। এই দুটি দাবির মধ্যে সব ঢুকে যায়।
শিক্ষা মৌলিক অধিকার হয়ে থাকলে, সেই অধিকার সবার হাতে তুলে দেয়ার দায়িত্ব সরকারের।
আজকে লজ্জার বিষয়, শিক্ষকরা থাকবেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু তারা রাজপথে এসে তাদের দাবি মেনে নেয়ার কথা বলেন, এটা লজ্জার। আমরা এসব দাবির পক্ষে বলেছি। শিক্ষা সংস্কারের কথা বলেছি। আপনার ন্যায্য দাবির পক্ষে ন্যায্যভাবে থাকবেন। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি।