ঢাকা, – দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি সম্প্রতি নেতৃত্ব পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় নতুন মাত্রা যুক্ত করছে। কেন্দ্রীয় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত কমিটি গঠনের প্রতিটি স্তরে তরুণ নেতাদের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে। দলের অভ্যন্তরে এই নীতিমালার মূল উদ্দেশ্য হলো তরুণ, উদ্যমী ও মেধাবী নেতাদেরকে প্রাধান্য দিয়ে ভবিষ্যতের রাজনীতিতে শক্তিশালী ভূমিকা পালন নিশ্চিত করা।
বিএনপিতে মহাসচিব হবেন তিনজন। একজন হবেন সাংগঠনিক বিষয়ক মহাসচিব, আরেকজন আন্তর্জাতিক বিষয়ক মহাসচিব এবং অন্যজন দায়িত্ব পালন করবেন প্রশাসনিক বিষয়ক মহাসচিব হিসেবে।
তরুণ নেতৃত্বে নয়া আশার সূচনা
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি, বিভাগ, জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে তরুণ নেতাদের নিয়োগের ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। জেলা কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে বিশেষ চমক দেখা যাচ্ছে, যেখানে ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাদেরকে প্রধানত নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজে কেন্দ্রীয় কমিটিতে তরুণ নেতাদের নতুন দায়িত্ব বণ্টনের মাধ্যমে দলের কার্যক্রমকে গতিশীল করার উদ্যোগ নিয়েছেন। সূত্র অনুযায়ী, আগামী জাতীয় কাউন্সিলে তরুণ নেতাদের এই প্রচেষ্টার প্রতিফলন আরও স্পষ্টভাবে দেখা যাবে।
নেতৃত্বের কাঠামো ও ব্যক্তিগত পরিচিতির প্রভাব
বিগত দেড় যুগ ধরে বিদেশে (বিশেষ করে লন্ডনে) থেকে নেতৃত্ব প্রদানের ফলে কেন্দ্রে থেকে তৃণমূল পর্যন্ত অনেক নেতার ব্যক্তিগত পরিচিতি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে গড়ে উঠেছে। এই কারণে, দলের নেতাদের মধ্যে কার কী অবস্থা ও দায়িত্ব নির্ধারণে তিনি সরাসরি ভূমিকা রাখছেন। তাঁর নখদর্পণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে, তরুণ নেতাদের ওপর যথেষ্ট আস্থা রেখে নতুন দায়িত্ব প্রদান করা হচ্ছে।
নতুন দায়িত্ব ও দৃষ্টিভঙ্গি
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, «পুরোনো নেতাদের অভিজ্ঞতা ও তরুণদের উদ্যমের সমন্বয়ে আমাদের দল আগামীতে নতুন ও শক্তিশালী নেতৃত্বে পরিণত হবে।» তাঁর এই বক্তব্যে স্পষ্টতা পাওয়া যায় যে, দলের নেতৃত্ব পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র অভিজ্ঞতা নয়, বরং তরুণদের উদ্যম ও মেধাকেও সমানভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
তনয়া ব্যারিস্টার জাইমা রহমানের সরাসরি যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনাও আলোচনার বিষয়। তাঁর সম্ভাব্য দায়িত্ব হতে পারে সাংগঠনিক কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে নেতৃত্ব প্রদান, যা দলের কর্মপদ্ধতি ও সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করবে। ইতোমধ্যে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ব্রেকফাস্ট প্রেয়ার’-এ দলের প্রতিনিধিরূপে অংশগ্রহণ করেছেন।
দলের অভ্যন্তরীণ সমন্বয় ও নির্দেশনা
বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, «নতুনদের স্থান করে দেওয়াটাই পুরোনোদের কর্তব্য। পুরোনোদের অভিজ্ঞতা এবং নতুনদের উদ্যমের সমন্বয়ে দল ও দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।» সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদও তরুণদের নেতৃত্বে আসার পথ উন্মুক্ত রাখার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে জোর দিয়েছেন। তাঁর মতে, তরুণদের মধ্যে যারা দক্ষ, যোগ্য এবং আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এসেছেন, তাদের সুযোগ বাড়ানো উচিত।
বিএনপির এই নতুন নীতিমালা ও গঠনমূলক পরিবর্তন দলের ভবিষ্যতকে আরও গতিশীল ও শক্তিশালী করে তোলার লক্ষ্যে গৃহীত হয়েছে। তরুণ নেতৃত্বের ওপর আস্থা রেখে দলের অভ্যন্তরীণ কাঠামো পুনর্গঠন ও দায়িত্ব বণ্টনের মাধ্যমে আগামী নির্বাচন এবং সরকার গঠন প্রক্রিয়ায় নতুন দিশা প্রদানের প্রত্যাশা রয়েছে। দলের পুরোনো অভিজ্ঞতা ও তরুণ উদ্যমের সমন্বয়ে বিএনপি সামনে আসছে একটি শক্তিশালী, একতাবদ্ধ ও প্রতিযোগিতামূলক রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে।