ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বৃষ্টিপাত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আসামের শিলচরে জুন মাসের প্রথম দিনেই ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ৪১৫ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা গত ১৩২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ১৮৯৩ সালের একদিনে হওয়া ২৯০ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ডও এদিন ভেঙে যায়। দেশটির গণমাধ্যম এনডিটিভি ও ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের (আইএমডি) তথ্য অনুযায়ী, সাইক্লোনিক ঘূর্ণাবর্ত ও নিম্নচাপ রেখার মিলিত প্রভাবে এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পূর্ব উত্তর প্রদেশ থেকে শুরু হয়ে নিম্নচাপের বিস্তার মধ্য আসাম হয়ে অরুণাচল প্রদেশ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে এবং তা বর্তমানে অতি সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে।
শুধু শিলচর নয়, পুরো উত্তর-পূর্বাঞ্চলজুড়েই টানা বৃষ্টি, বন্যা ও ভূমিধস ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে। গত তিন দিনে আসাম, মণিপুর, ত্রিপুরা, সিকিম ও অরুণাচল প্রদেশে অন্তত ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। মিজোরামে ৩১ মে একদিনেই স্বাভাবিকের চেয়ে ১,১০২ শতাংশ বেশি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। চেরাপুঞ্জি ও মৌসিনরামে টানা পাঁচ দিনে যথাক্রমে ৭৯৬ মিমি ও ৭৭৪ দশমিক ৫ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে ৩০ মে একদিনেই চেরাপুঞ্জিতে ৩৭৮ দশমিক ৪ মিমি বৃষ্টি হয়। এই পাঁচ দিনে সেখানে মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৯৩ দশমিক ৬ মিমি।
মেঘালয়ের অন্তত ১০টি জেলা আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ত্রিপুরায় দুর্যোগে বিপদে পড়েছেন ১০ হাজারের বেশি মানুষ। মণিপুরেও নদীর পানি উপচে পড়া ও বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় অন্তত ১৯ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৩৬৫টির বেশি বাড়ির।
২০২২ সালেও শিলচর শহর বড় ধরনের বন্যার সম্মুখীন হয়েছিল। সেবার বারাক নদীর বেথকুন্ডি এলাকার একটি বাঁধ ভেঙে গিয়ে শহরের প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। এবার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা করছে প্রশাসন।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এই অস্বাভাবিক ও ব্যাপক দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়াকে কেন্দ্র করে সরকারি ও উদ্ধারকারী সংস্থাগুলো সতর্কাবস্থা জারি করেছে। টানা বৃষ্টিপাত ও বন্যা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।