তুরস্কের ইস্তানবুলের মেয়র একরেম ইমামোগলু গ্রেপ্তারের পর দেশটির বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তা করার অভিযোগ আনা হয়েছে। ইস্তানবুল এবং রাজধানী আঙ্কারায় এই গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ চলছে।
বুধবার (২০ মার্চ) ইস্তানবুলের মেয়র ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার করার পরপরই তুরস্কের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে “উস্কানিমূলক” পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে কয়েক ডজন ব্যক্তিকে আটক করেছে।
তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়েরলিকায়া বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, পুলিশ ২৬১ জন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছে যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে “জনসাধারণকে ঘৃণা ও বিদ্বেষে উসকানি” দেওয়ার মতো পোস্ট করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, ৩৭ জনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এবং বাকিদের আটকের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৬টা পর্যন্ত (০৩:০০ জিএমটি) ইমামোগলুর গ্রেপ্তার সংক্রান্ত ১৮.৬ মিলিয়নেরও বেশি পোস্টসামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ইমামোগলুর বার্তা

ইস্তানবুলের ধারাবাহিকভাবে বিরোধীদলীয় প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হওয়া মেয়র একরেম ইমামোগলু প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের অন্যতম বড় রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত।
তিনি ২০২৮ সালের তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী হতে যাচ্ছিলেন। তার গ্রেপ্তারকে বিরোধী দল “গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থান” বলে উল্লেখ করেছে এবং তারা আরও বড় আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ইমামোগলু তার এক্স (Twitter) অ্যাকাউন্টে একটি বার্তা পোস্ট করে বলেন, “এই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জাতি হিসেবে আমাদের একসাথে দাঁড়াতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এই ঘটনা শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার লড়াই নয়, এটি জনগণের অধিকারের প্রশ্ন। সময় এসেছে সকলের কণ্ঠ উচ্চকিত করার।”
ইস্তানবুলে গণবিক্ষোভ
ইস্তানবুলের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ মিছিল বের করেছে। তারা স্লোগান দিচ্ছে—
➡️ “আমরা ভীত নই, আমরা চুপ থাকব না, আমরা বাধ্য হব না!”
শহরের বিভিন্ন মেট্রো স্টেশনে লাউডস্পিকারে ইমামোগলুর আগের বক্তৃতা বাজানো হচ্ছে। তার একটি বক্তব্যে তিনি বলছেন—
🗣️ “আমি আপনাদের সম্মানের সাথে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, আমি এই লড়াই জিতব!”
যদিও ইস্তানবুলের জনসংখ্যা ১.৬ কোটি, তবুও এখন পর্যন্ত বিক্ষোভের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে ছোট। তবে পরিস্থিতি আরও বড় আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিরোধীদের বক্তব্য ও সরকারের প্রতিক্রিয়া
তুরস্কের প্রধান বিরোধী দল গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র পার্টির (CHP) নেতা ওজগুর ওজেল বুধবার রাতে এক সমাবেশে বলেন—
🗣️ “আমাদের রাস্তায় নামতে হবে এবং প্রতিবাদ জানাতে হবে!”
ইস্তানবুলের প্রো-এরদোয়ান গভর্নর শহরে চার দিনের জন্য বিক্ষোভ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন।
ইমামোগলুর অফিস থেকে জনগণকে আহ্বান জানানো হয়েছে—
➡️ “আমাদের গণতন্ত্র রক্ষার জন্য দ্বিতীয় দিনের মতো সিটি হলের সামনে জমায়েত হোন!”
রাজনৈতিক দমন-পীড়ন নিয়ে শঙ্কা
তুরস্কে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক ও বিনোদন জগতের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ধরপাকড় অভিযান চলছে।
বিরোধীদের আশঙ্কা, আগামী দিনগুলোতে আরও অনেক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে, যা তুরস্কে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আরও বেশি হুমকি সৃষ্টি করবে।
বিশ্বের প্রতিক্রিয়া
➡️ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং দেশ ইতোমধ্যে তুরস্কের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
➡️ মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এটি গণতন্ত্রের ওপর আঘাত এবং বিরোধীদের “ভয় দেখানোর কৌশল” হিসেবে দেখা হচ্ছে।
➡️ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই ঘটনার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে?
➡️ ইস্তানবুল ও আঙ্কারায় বিক্ষোভ ক্রমশ বড় আকার ধারণ করতে পারে.
➡️ প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সরকার বিরোধী নেতাদের দমনের জন্য কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে.
➡️ ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ঘিরে তুরস্কের রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে.
📌 সর্বশেষ আপডেট জানতে আমাদের সঙ্গে থাকুন।