গাজায় চলমান যুদ্ধের ফলে ইহুদি সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। নিউ জার্সির উডল্যান্ড পার্কে “গান ফর হায়ার” শুটিং রেঞ্জের প্রবেশদ্বারে একটি বড় মেজুজাহ (ইহুদিদের দরজায় লাগানো প্রার্থনা স্ক্রল) ঝুলছে। সেখানে গিফট-শপে গুলি দিয়ে সজ্জিত কিপ্পোত (মাথার কাপড়) বিক্রি হচ্ছে। রেঞ্জটি স্থানীয় ইহুদি সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেয় এবং সিনাগগের নিরাপত্তা দলকে প্রশিক্ষণ দেয়। “আমরা পুরো মিনিয়ান (ইহুদি প্রার্থনা দলের সদস্য) নিয়ে এখানে শুটিং করতে আসি,” বলেছেন ফিল স্টার্ন, একজন ম্যানেজার।
নিউ ইয়র্ক স্টেট ইহুদি গান ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা টসভি ওয়াল্ডম্যান বলেন, “বছরের পর বছর ধরে ইহুদি সম্প্রদায়ের মধ্যে অস্ত্র এবং প্রশিক্ষণের চাহিদা বেড়েছে।” তিনি জানান, বর্তমানে আরও অনেক লিবারেল ইহুদি তার কাছ থেকে অস্ত্র মালিকানা সম্পর্কে পরামর্শ নিচ্ছেন। এটি তাদের নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি এবং সাদা জাতীয়তাবাদের ভয়ের কারণে হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। তবে তিনি এটিও মনে করেন যে, ৭ অক্টোবরের পর অনেকেই মনে করছেন যে বিপদের স্তর “অনেকটা বেড়ে গেছে”।
৭ অক্টোবরের দিনটি ছিল ইহুদি সম্প্রদায়ের জন্য এক নৃশংস স্মৃতি, যখন আরও বেশি ইহুদি নিহত হয়েছিল যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কোন দিন ঘটেনি। এটি ইসরায়েলিরা তাদের সেনাবাহিনী এবং গোয়েন্দা সেবার ওপর তাদের আস্থা ভেঙে দিয়েছে। বহির্বিশ্বের ইহুদিদের জন্য এটি ইসরায়েলের অস্তিত্বের মূল কারণকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছিল: এক দীর্ঘকালীন নিপীড়িত জাতির জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হওয়া।
এটি ইসরায়েলের সীমানা ছাড়িয়ে গিয়ে গোটা পৃথিবীতে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ইহুদি পরিবার এবং বন্ধুদের জন্য উদ্বেগ তো ছিলই, তবে আরও উদ্বেগের বিষয় ছিল অ-ইহুদি বন্ধুদের এবং প্রতিবেশীদের সেই হত্যাকাণ্ডের প্রতি নির্লিপ্ততা এবং এমনকি তা সমর্থন করার বিষয়টি।
বিশ্বব্যাপী ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ৩৪০% বাড়ানোর তথ্য দিয়েছে ইহুদি এজেন্সি। আমেরিকায় অ্যান্টি-ডিফেমেশন লিগ জানিয়েছে যে, বর্তমানে ৮৩% ইহুদি ছাত্র ইহুদি বিদ্বেষের শিকার হচ্ছেন।
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ আরও ক্ষতির অনুভূতি সৃষ্টি করেছে। অনেক ইহুদি যাদের প্রথমে ইসরায়েলের পদক্ষেপ সমর্থন করেছিল, তারা এখন দ্বিধান্বিত হচ্ছেন, কারণ গাজায় হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। কিছু মানুষের জন্য এটি তাদের নিজস্ব ইহুদি পরিচয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, আবার অন্যদের জন্য এটি একটি নতুন রূপে ইহুদি পরিচয় খুঁজে পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে, ইসরায়েল ও আমেরিকাতে ইহুদি সম্প্রদায়ের জন্য এটি একটি সংকটকাল, যেখানে একদিকে নিজেদের সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ এবং অন্যদিকে ইসরায়েলের ভূমিকা নিয়ে সংশয় দেখা দিচ্ছে।