নিশ্চিদ্র প্রতিরক্ষার প্রতীক হিসাবে পরিচিত ইসরাইলের আয়রন ডোম বহু বছর ধরে দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষার মূল স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। ছোট ও মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে একে “অভেদ্য” বলে দাবি করে এসেছে তেল আবিব। তবে ইরানের একযোগে চালানো ব্যালিস্টিক, ক্রুজ ও হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের সুনামিতে সেই গর্ব আজ চূর্ণ।
তীব্র ও বহুমুখী ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আয়রন ডোম কার্যত ভেঙে পড়ে। সামরিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ওভারলোড হয়ে যায় এবং অনেক ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে ব্যর্থ হয়। সবচেয়ে বড় আঘাতটি আসে রাজধানী তেল আবিবে— যেখানে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে প্রতিরক্ষা বাহিনীর কেন্দ্রস্থলে। ধ্বংস হয় সামরিক সদর দপ্তরসহ একাধিক স্থাপনা।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এপি and দ্য টাইমস জানায়, ইরান থেকে ছোড়া শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষার বিভিন্ন স্তরকে একযোগে চ্যালেঞ্জ করে। এদের মধ্যে ছিল ব্যালিস্টিক, ক্রুজ এবং হাইপারসনিক ধরনের মিসাইল।
একটি যাচাই করা ১৯ সেকেন্ডের ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, একটি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রকে আয়রন ডোম বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে সেই ক্ষেপণাস্ত্র আয়রন ডোমকে এড়িয়ে চোখের পলকে তেল আবিবের প্রতিরক্ষা সদর দপ্তরে আঘাত হানে।
দোহার ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের নিরাপত্তা বিশ্লেষক মুহান্নাদ সেলুম বলেন—
“আয়রন ডোম মূলত স্বল্প পাল্লার হামলার জন্য ডিজাইন করা। কিন্তু ইরানের হামলা ছিল বহু স্তরবিশিষ্ট ও দূরপাল্লার, যা আয়রন ডোমের ক্যালকুলেশনের বাইরে।”
তিনি আরও জানান, ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একটি সমন্বিত নেটওয়ার্ক হলেও এত বড় পরিসরের ও সমন্বিত হামলায় সেটি চাপ সামলাতে পারেনি।
উল্লেখ্য, আয়রন ডোম সাধারণত ৪ কিমি থেকে ৭০ কিমি (২.৫–৪৩ মাইল) দূরত্বে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র থামাতে সক্ষম। তবে হাইপারসনিক মিসাইল ও স্বয়ংক্রিয় গতিপথ পরিবর্তনকারী মিসাইলের বিরুদ্ধে এটির সক্ষমতা প্রশ্নবিদ্ধ।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের এই হামলা প্রমাণ করেছে— ইসরাইলের প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্ব এখন আর প্রশ্নাতীত নয়। এই ব্যর্থতা শুধু সামরিক দিক থেকে নয়, কৌশলগতভাবে ইসরাইলের জন্য একটি বড় আঘাত।