জাবেদ শেখ, শরীয়তপুর প্রতিনিধি:
এটা কোনো গল্প নয়—এটা এক নির্মম বাস্তবতা। ভাঙা মনের এক বাবার বিকৃত বিবেক আর মাদকের নির্মম ছোবলের চিত্র। শরীয়তপুর জেলার চরপালং ইউনিয়নের বাতাস যেন আজও বয়ে বেড়ায় এক নবজাতকের কান্না—যে কান্না ‘বিক্রি’ হয়েছিল মাত্র ৩১ হাজার টাকায়।
ঘটনাটি ঘটেছে নড়িয়ার ফতেজঙ্গপুর গ্রামের বাসিন্দা ইব্রাহীম হাওলাদারকে কেন্দ্র করে, যিনি পরিবার নিয়ে থাকতেন শরীয়তপুর শহরের একটি ভাড়া বাসায়। দীর্ঘদিন ধরে মাদকের নেশায় আসক্ত ছিলেন ইব্রাহীম। এরই মধ্যে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি। যখন আর কোনো উপায় খুঁজে পাননি, তখনই নেন অমানবিক এক সিদ্ধান্ত—নিজের মাত্র দেড় মাস বয়সী পুত্রসন্তানকে বিক্রি করে দেন প্রতিবেশীর কাছে।
প্রতিবেশী ইকবাল হোসেন ও তার স্ত্রী মুক্তা আক্তারের হাতে তুলে দেন নবজাতকটিকে, বিনিময়ে গ্রহণ করেন ৩১ হাজার টাকা। সেই টাকায় ইব্রাহীম তার কিছু ঋণ শোধ করেন এবং মাদক কেনেন বলে জানা গেছে।
এই অমানবিক ঘটনায় এক প্রতিবেশী জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করলে দ্রুত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে। পরে শিশুটিকে তুলে দেওয়া হয় তার দাদা-দাদি—শওকত হাওলাদার ও তার স্ত্রীর কাছে।
শিশুটির দাদা শওকত হাওলাদার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার ছেলে এমন জঘন্য কাজ করবে, এটা কখনো ভাবিনি।”
শুধু পিতা নন, শিশুটির মা শ্রাবণীও এই সিদ্ধান্তে যুক্ত ছিলেন বলে জানা গেছে। উভয়কে পুলিশ আটক করলেও, লিখিত অভিযোগ না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি।
এই ঘটনাটি নতুন করে প্রশ্ন তোলে—নেশা কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে! মাদক শুধু একজন মানুষকে ধ্বংস করে না, সে ভেঙে ফেলে গোটা পরিবারকে, কেড়ে নেয় সন্তান, সম্পর্ক, এমনকি মানবতা পর্যন্ত।
আজ সেই নবজাতক রয়েছে দাদা-দাদির কোলে। তবে প্রশ্ন থেকে যায়—এই শিশুর ভবিষ্যৎ কী? এই ঘটনার দায় কাদের? পরিবার? সমাজ? রাষ্ট্র? নাকি আমরা সবাই?
একটি সন্তান যেন কখনোই ‘মূল্য’ দিয়ে মাপা না হয়—এই প্রত্যয় নিয়েই বলি: মাদককে না বলুন, বিবেককে বাঁচান।