রুশাইদ আহমেদ, রংপুর :
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মাহামুদুল হক ময়নাতদন্ত ছাড়াই দায়ের করা একটি হত্যা মামলায় গত দুদিন ধরে রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রয়েছেন। বিষয়টি ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনার পেছনের অনুসন্ধান
তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ২ আগস্ট রংপুরের হাজীরহাট এলাকায় বৈষম্যবিরোধী একটি আন্দোলনের সময় সমেছ উদ্দিন নামে এক মুদি দোকানি পুলিশের উপস্থিতিতে দৌঁড়ে পালাতে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সেসময় প্রাইম মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসকরা মৃত্যুর কারণ স্ট্রোক বলে নিশ্চিত করেন।
তবে মৃত্যুর প্রায় দশ মাস পর, চলতি বছরের ৩ জুন সমেছ উদ্দিনের স্ত্রী আমেনা বেগম হাজীরহাট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা সংক্রান্ত কাগজপত্রে বলা হয়, সমেছ উদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মামলায় মোট ৫৪ জনকে আসামি করা হয়, যার মধ্যে সরকারের উচ্চপর্যায়ের দুই নেতার নামও রয়েছে।
গ্রেপ্তার শুধুমাত্র ৫৪তম আসামি
বিস্ময়ের বিষয় হলো, মামলার শীর্ষে থাকা কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার না করে ৫৪তম আসামি হিসেবে শিক্ষার্থীপ্রিয় শিক্ষক মো. মাহামুদুল হককে ১৯ জুন ভোরে নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাকে থানায় না নিয়ে সরাসরি আদালতে হাজির করা হয় এবং জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়।
বাদীর অজ্ঞতা ও আইনি অসঙ্গতি
মামলার বাদী আমেনা বেগম ও তার সন্তান আশিকুর রহমান জানিয়েছেন, তারা মামলার আসামিদের বিষয়ে কিছুই জানেন না এবং থানার পক্ষ থেকেই তাদের কাছ থেকে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছিল।
Experts say, ময়নাতদন্ত ছাড়াই একটি হত্যা মামলায় চার্জ গঠন করা ও তদন্ত চালানো আইনি প্রক্রিয়ার গুরুতর ব্যত্যয়। একইসঙ্গে, বাদীর পক্ষ থেকেই মামলার বিষয়ে অজ্ঞতা মামলার গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
প্রতিবাদ ও প্রতিক্রিয়া
বেরোবি শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, গবেষক এবং দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও সহকর্মীরা মাহামুদুল হকের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘#FreeMahmudul’ হ্যাশট্যাগে চলেছে প্রচারণা।
২০ জুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা দুই দফা মানববন্ধন করেন। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন।
শিক্ষার্থী মো. সোহাগ আলী বলেন, “মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে কুপিয়ে হত্যা, অথচ মৃত্যুর কারণ ছিল স্ট্রোক। বাদীও জানেন না তিনি কাকে অভিযুক্ত করেছেন। এটা সুস্পষ্টভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”
Police statement
হাজীরহাট থানার ওসি ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মামুন শাহ বলেন, “এজাহারে নাম থাকায় তদন্তের স্বার্থে মাহামুদুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদালতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উপস্থাপন করা হবে।”
কে এই মাহামুদুল হক?
মাহামুদুল হক সাংবাদিকতা ও গবেষণাক্ষেত্রে সুপরিচিত একটি নাম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গোল্ড মেডেলপ্রাপ্ত এই শিক্ষক ২০১৯ সালে বেরোবিতে যোগদানের আগে দ্য ডেইলি স্টার ও ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশে (ইউএনবি) দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি, তিনি ইউএনডিপি ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে গবেষণা ও পরামর্শকের কাজ করেছেন।
তিনি সামাজিক মাধ্যমে সরকারের সমালোচনামূলক মতামতের জন্য পরিচিত। বিশেষ করে গত বছরের আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করে আলোচনায় আসেন।