মোঃ আব্দুল কুদ্দুস, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:
পবিত্র ঈদ-উল-আজহা সামনে রেখে সিরাজগঞ্জ জেলায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে প্রায় ৬ লাখ ৫৫ হাজার ৯০৪টি গবাদিপশু। যা জেলার চাহিদার দ্বিগুণেরও বেশি। চাহিদা মিটিয়ে এসব পশু রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ একে এম আনোয়ারুল হক সবুজ জানান, জেলার ৯টি উপজেলায় প্রস্তুত গবাদিপশুর মধ্যে রয়েছে—
- ষাঁড়, বলদ ও গাভী: ১ লাখ ৮৪ হাজার ৮০০টি
- ছাগল: প্রায় ৪ লাখ
- মহিষ: ৩ হাজার ৮৭৫টি
- ভেড়া: ৬৭ হাজার ৩০৩টি
জেলার কোরবানির পশুর চাহিদা প্রায় ২ লাখ ৫৯ হাজার ২৪১টি, বাকি ৩ লাখ ৯৬ হাজার ৬৬৩টি পশু দেশের অন্যান্য জেলায় সরবরাহের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জের চরাঞ্চলে প্রাকৃতিক ঘাসের প্রাচুর্য থাকায় সেসব অঞ্চলে প্রাকৃতিক উপায়ে গরু-ছাগল লালন-পালন হয়, যার ফলে এখানকার পশুর চাহিদা সারাদেশে বেশি।
প্রায় পাঁচ দশক আগে শাহজাদপুর ও বাঘাবাড়ীতে মিল্কভিটার দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা গড়ে ওঠার পর থেকে এ জেলায় গরুর খামারের বিকাশ ঘটে। বর্তমানে জেলার উল্লাপাড়া, কামারখন্দ, তাড়াশ ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার গ্রামাঞ্চলে খামার ও পারিবারিকভাবে পশু পালন করা হয়।
খামারিরা জানান, প্রাকৃতিক উপায়ে খড়, ঘাস, ভুষি ও ভিটামিন খাইয়ে ষাড় মোটাতাজাকরণ করছেন তারা। তবে পশু খাদ্যের দাম ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন অনেকেই। একাধিক খামারির অভিযোগ, প্রতি বস্তা গো-খাদ্যের দাম আগের চেয়ে ৩০০–৪০০ টাকা বেশি হওয়ায় মোটাতাজাকরণের খরচও বেড়েছে অনেক।
ভারতীয় গরুর হুমকি ও ক্ষতির আশঙ্কা
প্রান্তিক খামারিরা আশঙ্কা করছেন, কোরবানির হাটে যদি অবাধে ভারতীয় গরু প্রবেশ করে, তাহলে দেশীয় মোটাতাজা পশুর ন্যায্যমূল্য মিলবে না। এতে লোকসানে পড়তে হবে তাদের।
চাঁদাবাজি ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ
কামারখন্দ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, রায়গঞ্জ ও বেলকুচি উপজেলার ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, পশু পরিবহনের সময় সড়ক ও নৌপথে হয়রানি ও চাঁদাবাজির শিকার হতে হয়।
শাহজাদপুরের গরু ব্যবসায়ী মুন্সী আবুল কালাম আজাদ, মেহেদী ও সোহেল রানা বলেন, “যমুনা নদীপথে পশু নিতে গেলে মাঝপথে জোর করে নৌকা থামিয়ে পশু নামাতে বলা হয়, এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ি আমরা।”
সিরাজগঞ্জ সদরের ব্যবসায়ী শিশির আহমেদ, আনোয়ার হোসেন ও মজিবর শেখ বলেন, “মহাসড়কে ডাকাতির ঝুঁকি বেশি। প্রশাসনের নজরদারি জরুরি। আমরা সারা বছর খেটে গরু পালি, ডাকাতির শিকার হতে চাই না।”
প্রশাসনের আশ্বাস ও উদ্যোগ
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুর রউফ জানান, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিতে একাধিক পুলিশ টিম কাজ করবে।
সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার মোঃ ফারুক হোসেন বলেন, “পশুবাহী যানবাহনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। হাট কেন্দ্রিক অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকবে।”
টাঙ্গাইল অঞ্চলের নৌ পুলিশ সুপার মো. সোহেল রানা বলেন, “যমুনা নদীতে টহল ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।”
বগুড়া অঞ্চলের হাইওয়ে পুলিশ সুপার মোঃ শহিদ উল্লাহ জানান, “চাঁদাবাজি রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ব্যবসায়ীদের নগদ অর্থ না বহন করে ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছি।”
সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) গণপতি রায় বলেন, “অনুমোদিত হাট ছাড়া অন্য কোথাও অস্থায়ী হাট বসালে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হবে।”
ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা
প্রশাসনের এমন উদ্যোগে খামারি ও ব্যবসায়ীরা কিছুটা আশাবাদী হলেও বাস্তবায়ন নিয়েই তাদের দুশ্চিন্তা। তারা চান, হাটে যেন ভারতীয় গরু প্রবেশ না করে এবং চাঁদাবাজি-ডাকাতি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা বাস্তবে কার্যকর হয়।